বাসস
  ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৭

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি : কোনোভাবেই ভয়ভীতি বা চাপের কাছে নত হবেন না

ঢাকা, ১৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তাকে ভয় দেখাতে পারবেন না। শুক্রবার আলাস্কায় অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগের দিন তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেকোনো সমঝোতায় ইউক্রেন নিজেও থাকবে।

আঙ্কোরেজ থেকে এএফপি জানায়, শুক্রবার ট্রাম্পের আমন্ত্রণে পুতিন আলাস্কা যাচ্ছেন। ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর এই প্রথম তিনি কোনো পশ্চিমা দেশে যাচ্ছেন।

ওই হামলায় কয়েক লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন।

রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করায় ক্রেমলিন জানিয়েছে, দুই প্রেসিডেন্ট একান্ত বৈঠকে বসবেন। এতে ইউরোপীয় নেতাদের আশঙ্কা বেড়েছে যে পুতিন হয়তো কিয়েভের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক সমঝোতায় ট্রাম্পকে রাজি করিয়ে নেবেন।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট। ও আমার সঙ্গে খেলা করতে পারবে না।’

তিনি জানান, ‘প্রথম দুই-তিন-চার-পাঁচ মিনিটেই বুঝে যাব, বৈঠক ভালো হবে নাকি খারাপ। খারাপ হলে খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে। আর ভালো হলে অচিরেই শান্তি আসবে।’

তবে তিনি স্বীকার করেন, বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা চার ভাগের এক ভাগ।

ট্রাম্প অতীতে পুতিনের প্রশংসা করেছিলেন এবং ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে এক শীর্ষ বৈঠকের পরে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে মস্কো কোন হস্তক্ষেপ করেনি, রাশিয়ার এমন দাবি তিনি মেনে নিয়েছিলেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এবার আলাস্কার বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি এটিকে পুতিনকে পুরস্কৃত করার মতো বলে সমালোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছাড়ার বিষয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে কোনো একক চুক্তি চূড়ান্ত করবেন না। বরং আলাস্কা বৈঠকের পরপরই জেলেনস্কিকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করার আশা প্রকাশ করেছেন।

ফক্স নিউজ রেডিওকে ট্রাম্প বলেন, ‘দ্বিতীয় বৈঠকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেখানে চুক্তি হবে। আমি ‘ভাগাভাগি’ শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না, কিন্তু অনেকটা সেরকমই হবে।’

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ভবিষ্যতের যেকোনো চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

তবে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ না দিতে দেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থানকে সমর্থন করেছেন ট্রাম্প।

আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু পুতিনকে দেওয়া তার ফোন কল এবং জেলেনস্কিকে কিছু শর্ত মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার পড়েও রুশ প্রেসিডেন্ট তার অবস্থান পরিবর্তন করেননি। এতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পুতিন তার আহ্বান উপেক্ষা করলে ‘খুব কঠিন পরিণতি’ হবে।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে (গ্রিনিচ সময় ১৯:৩০) আলাস্কার এলমেনডর্ফ বিমানঘাঁটিতে বৈঠক শুরু হবে। রাশিয়াকে নজরদারিতে রাখতে ঘাঁটিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

এদিকে, জেলেনস্কি লন্ডনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে স্টারমার ইউক্রেনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। এক দিন আগে তিনি বার্লিন থেকেও সমর্থন পেয়েছেন।

আলাস্কা বৈঠকের আগে রাশিয়া ইউক্রেনে বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন করেছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেন পূর্বাঞ্চলের দ্রুজকিভকা শহর এবং আশপাশের চারটি গ্রাম থেকে শিশু ও পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ওই এলাকায় রাশিয়া দ্রুত অগ্রগতি করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কূটনৈতিক উদ্যোগে এখন পর্যন্ত বন্দি বিনিময় ছাড়া বড় কোনো সাফল্য আসেনি।
 
বৃহস্পতিবার রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ৮৪ জন ইউক্রেনীয় বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে বিনিময়ে সমান সংখ্যক রুশ সেনা ফিরে পেয়েছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, যুদ্ধ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত বিভক্ত।  ৫৯ শতাংশ মার্কিন জনগণ ট্রাম্পের কূটনৈতিক দক্ষতায় আস্থা রাখেন না।

বৈঠকটির আয়োজক শহর আঙ্কোরেজে পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক দৃশ্যের মাঝেও বৈশ্বিক মনোযোগের কোনো ইঙ্গিত নেই। কেবল শহরের মূল রাস্তাগুলোয় পুতিনবিরোধী সাইনবোর্ড দেখা গেছে। বৈঠক নিয়ে সাধারণ মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।

উত্তর ক্যারোলিনার ৬২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত জে আহুজা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানানোই ভুল। আমার আশঙ্কা, তিনি সব কিছু দিয়ে দেবেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।’

অন্যদিকে, ওহাইওর ৬৩ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত কিম্বারলি ব্রাউন মনে করেন, সম্মেলনের জন্য আলাস্কা ‘আদর্শ স্থান’। তার ভাষায়, ‘বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পই সেরা ব্যক্তি।’