শিরোনাম
ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : নয়াদিল্লির রাশিয়ান তেল ক্রয় অব্যাহত রাখার প্রতিবাদে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন। যা শুল্কের আরেকটি ঢেউ কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে তার বাণিজ্য যুদ্ধের এক নতুন মোড় খুলে দিয়েছে। এই নতুন ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া আরেক দফা ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর আরোপিত হবে। ফলে, অনেক ভারতীয় পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
ট্রাম্পের আদেশ অনুযায়ী, রাশিয়ার তেল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমদানি করা অন্যান্য দেশও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে পারে। তার মতে ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থ জোগানোর মস্কোর অন্যতম উৎস হল এই জ্বালানি রপ্তানি। তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো নির্দিষ্ট খাতে আরোপিত শুল্ক এবং ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো পণ্য পরবর্তী সময়ে লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এখনই এমন পণ্যে এই শুল্ক কার্যকর হবে না।
চীনের পরিবর্তে ভারতে উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলায় সাময়িক স্বস্তি দিয়ে অ্যাপলের স্মার্টফোনগুলো এই শুল্কের বাইরে রাখা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে।
ভারত পূর্বে জানিয়েছিল, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের বাজারে জ্বালানি সরবরাহ সরানো হলে তারা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে। তখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই পদক্ষেপকে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে স্থিতিশীলতা আনার অংশ হিসেবে উৎসাহ দিয়েছিল। তবে সম্প্রতি এই তেল আমদানির কারণে ট্রাম্প ভারতকে নতুন করে চাপ দিচ্ছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন।
নয়াদিল্লির মিডিয়া জানিয়েছে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বুধবার মস্কো সফরে ছিলেন। একই দিনে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফও ভারত সফরে ছিলেন।
যদিও অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কটি ট্রাম্পের গত মাসের ঘোষিত সম্ভাব্য ১০০ শতাংশের তুলনায় কম। তবে সেই সময় তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, যদি রাশিয়া ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ না করে, তবে তার বাকি সব বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ বসানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের নিম্নতম পর্যায়
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক ফারওয়া আমের বলেন, ‘এতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে।’
তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাবির সামনে নতি স্বীকার করতে ভারতের ওপর ঘরোয়া চাপ বাড়বে। তবে এটি খুব কঠিন পথ হতে চলেছে।
ট্রাম্প শুধু ভারত নয়, ব্রাজিলের দিকেও নজর দিয়েছেন। সেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টার বিচার চলছে। এর ফলে ব্রাজিলের পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে কমলার রস ও বেসামরিক বিমানসহ কিছু পণ্যে ছাড় থাকায় আঘাত খানিকটা কম হতে পারে।
ব্রাজিল বুধবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ শুল্কের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে তাইওয়ানসহ ডজনখানেক অর্থনীতির ওপর নতুন এক দফা শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে। এই ‘পারস্পরিক’ শুল্কের হার সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হতে যাচ্ছে। যেমনটি সিরিয়ার ক্ষেত্রে করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অর্থনীতিগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হতে যাচ্ছে।
যেসব দেশ এই ‘পারস্পরিক’ হারে অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের ক্ষেত্রে এপ্রিল থেকে কার্যকর থাকা ১০ শতাংশ শুল্ক অব্যাহত থাকবে।
শুল্ক বৃদ্ধির আতঙ্কে থাকা দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার-সুটার বৃহস্পতিবারের আগে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন। যদিও ট্রাম্প বা শীর্ষ অর্থনৈতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।
সুইজারল্যান্ডের ওষুধ খাত আপাতত ৩৯ শতাংশ নতুন শুল্ক থেকে বাদ থাকলেও ট্রাম্প হুঁশিয়ার করেছেন ভবিষ্যতে ওষুধের ওপর শুল্ক ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অনেক শুল্কই জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আরোপ করায় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেগুলোর গন্তব্য হতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।
জাপানের শুল্ক দূত রিয়োসেই আকাজাওয়াও ওয়াশিংটনে আছেন, আলোচনা করছেন জাপানি গাড়ির ওপর শুল্ক ২৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে যেমন শুল্ক ১৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে, জাপানের ক্ষেত্রে তেমন হবে না। বরং নতুন পারস্পরিক শুল্ক বর্তমান শুল্কের সঙ্গেই যোগ হবে।
জুলাইয়ে একটি চুক্তির মাধ্যমে জাপান অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে বেঁচে গেলেও, ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের জাপানি বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার সিএনবিসিকে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা এমন এক সাইনিং বোনাস, যেটা বড় কোনো বেসবল খেলোয়াড় পায়। এটা আমাদের অর্থ, যেটা আমরা যেখানে খুশি, সেখানে বিনিয়োগ করবো।’