শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদর দফতর পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়।
বৃহস্পতিবার এই পরিদর্শনকালে ট্রাম্প ফেডের সুদের হার না কমানোয় পাওয়েলকে দায়ী করে তাকে অপসারণের হুমকি দেন। যদিও আইনত তার এমন ক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ফেড সদর দপ্তরের সংস্কার ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ফেড ভবন পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সামনে এই দুজনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিব্রতকর বাক্যবিনিময় ঘটে। সংস্কারের খরচ ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বলে ট্রাম্প দাবি করলে পাওয়েল তা সংশোধন করে জানান প্রকৃত ব্যয় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্প যে কাগজপত্র দেখান, তাতে ‘উইলিয়াম ম্যাকচেসনি মার্টিন জুনিয়র বিল্ডিং’য়ের সংস্কার ব্যয়ও যুক্ত ছিল।
যদিও সেটি প্রকল্পের অংশ নয়। পাওয়েল স্পষ্ট বলেন, আপনি মার্টিন ভবনের খরচও ধরেছেন, এটি প্রকল্পে নেই।
ট্রাম্প পাল্টা বলেন, সেটিও সামগ্রিক প্রকল্পের অংশ। পাওয়েল জবাব দেন, না, ওটা পাঁচ বছর আগেই শেষ হয়েছে। এটা নতুন নয়। টেলিভিশন লাইভে বিবাদ চলাকালীন উভয়ের মধ্যে স্পষ্ট উত্তেজনা দেখা যায়।
এই সফর এমন এক সময়ে হয়েছে যখন ট্রাম্প তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে জেফরি এপস্টেইনের মামলা বন্ধ করা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট থেকে মনোযোগ সরাতে মরিয়া।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, এ বছরের বসন্তে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন, এপস্টেইনের নথিপত্রে তার নামও রয়েছে। ২০১৯ সালে কারাগারে আত্মহত্যা করার আগে, এপস্টেইনের বিরুদ্ধে ধনবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন কাজে বাধ্য করার অভিযোগ ছিল।
এপস্টেইনের এ খবরকে চাপা দিতে ট্রাম্প এখন নানা টার্গেটে আঘাত করছেন। ডেমোক্রেটিক পূর্বসূরি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদেরও ছাড়ছেন না।
তিনি বুধবার সুদের হার নিয়ে জেরোম পাওয়েলকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন এবং বৃহস্পতিবারের সফরের সময় ১০ বারেরও বেশি ঋণ গ্রহণের উচ্চ খরচ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যত ভালো করছি, আরও ভালো করতাম যদি সুদের হার কম হতো।’
ফেডারেল রিজার্ভে প্রেসিডেন্টের সফর অতীতে দেখা গেছে, ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, জেরাল্ড ফোর্ড ও জর্জ ডব্লিউ. বুশ সফর করেছিলেন। তবে এবারের ঘটনাটি বেশ বিরল।
ট্রাম্প মাসের পর মাস ধরে পাওয়েলের সমালোচনা করে আসছেন, কারণ পাওয়েল সুদের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশে রেখেছেন, যদিও গত বছর জো বাইডেনের শাসনে এটি তিনবার কমানো হয়েছিল।
পাওয়েল বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন নতুন আমদানি শুল্কের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে।
কিন্তু ট্রাম্প তাকে ‘মূর্খ’ ও ‘পরাজিত’ বলে কটাক্ষ করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে পাওয়েল দেশের অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিচ্ছেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি কিছুটা নরম সুরে বলেন, তাদের মধ্যে ‘অর্থনীতি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে এবং কোনো উত্তেজনা ছিল না।’
ট্রাম্প বলেন, ‘একটু দেরি হয়ে গেছে বটে, তবে আমি বিশ্বাস করি তিনি সঠিক কাজটি করবেন।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ৮৮ বছরের পুরনো ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান কার্যালয় ও পাশের একটি ভবনের সংস্কার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি নজরে এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। প্রাথমিকভাবে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কথা থাকলেও পরে তা ৬০০ মিলিয়ন ডলার বেড়ে গেছে।
এই ব্যয়বৃদ্ধির একটি বড় কারণ ভবনের নিরাপত্তা যেমন বিস্ফোরণ প্রতিরোধী জানালা ও ভবন ধ্বংস ঠেকানোর ব্যবস্থা।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ স্বাধীনভাবে নীতিনির্ধারণ করে এবং এর বোর্ড সদস্যরা সাধারণত উভয় দলীয় প্রেসিডেন্টদের অধীনে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের পাওয়েলকে বরখাস্তের ক্ষমতা নেই, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্তের পর, যা ফেডের ওপর প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করে দিয়েছে।