বাসস
  ২০ জুলাই ২০২৫, ১৯:৫৭

পশ্চিমা সহায়তা হ্রাসে এশিয়ায় প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ পাবে চীন : অস্ট্রেলীয় গবেষণা

ঢাকা, ২০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অন্যান্য পশ্চিমা দাতাদের সহায়তা হ্রাসের ফলে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়নে তার প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে রোববার অস্ট্রেলিয়ার লোই ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা এমনটাই জানিয়েছে।

সিডনিভিত্তিক থিংকট্যাংকটি জানায়, অঞ্চলটি বর্তমানে একটি ‘অনিশ্চিত মুহূর্তের’ মধ্যে রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন অর্থায়ন কমছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষভাবে শাস্তিমূলক’ বাণিজ্য শুল্ক আরোপও বাড়ছে।

সিডনি থেকে এএফপি প্রতিবেদনের বরাতে জানায়, ‘পশ্চিমা সহায়তা হ্রাস পেলে চীনের প্রভাব বাড়বে, যদিও অন্যান্য এশীয় দাতারাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

২০২৩ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মোট আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন অর্থায়ন (অনুদান, স্বল্পসুদে ঋণ ও অন্যান্য ঋণসহ) সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রমের প্রায় পুরোটা- ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার- বন্ধ করে দেন।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ফ্রান্স ও জার্মানি সহ সাতটি ইউরোপীয় দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে মোট ১৭.২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে।

এছাড়া যুক্তরাজ্যও প্রতিরক্ষা খাতে অর্থ পুনঃবিনিয়োগের জন্য বার্ষিক সহায়তা ৭.৬ বিলিয়ন ডলার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এই সব পদক্ষেপের ভিত্তিতে গবেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে ২০২৬ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন অর্থায়ন ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে যেতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, ‘এই সহায়তা কাটছাঁট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য কঠিন হবে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুশীল সমাজের মতো খাতে নির্ভরশীল দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।’

এই অঞ্চলের উন্নয়ন তহবিলের বেশিরভাগ অংশই ইতিমধ্যে উচ্চ আয়ের দেশগুলো পেয়ে থাকে। ফলে পূর্ব তিমুর, ক্যাম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারের মতো দরিদ্র দেশগুলো আরও পিছিয়ে পড়ছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা, সাম্য এবং সহনশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

অঞ্চলটিতে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, তথাপি এখনও প্রায় ৮৬ মিলিয়ন মানুষ দৈনিক ৩.৬৫ ডলারের নিচে আয় করে বেঁচে আছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন অর্থায়নের ভারসাম্য পূর্বদিকে, বিশেষ করে বেইজিংয়ের দিকে সরে যাচ্ছে। টোকিও ও সিউলও এ প্রবণতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দুর্বল হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিকল্প উন্নয়ন অর্থায়নের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে ভালো চুক্তি করতে সক্ষমতারও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

‘চীনের গুরুত্ব উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাড়বে, কারণ পশ্চিমা দেশগুলো সরে যাচ্ছে।’

চীন ২০২৩ সালে অঞ্চলটিতে ১.৬ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে মোট ৪.৯ বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহায়তা দেয়, যার বেশিরভাগই অবকাঠামোগত প্রকল্পে, যেমন ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় রেলপথ নির্মাণ।

এছাড়া চীনের অবকাঠামো প্রতিশ্রুতি চার গুণ বেড়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে, যার একটি বড় অংশ ছিল মিয়ানমারের কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প পুনরায় চালুর জন্য।

এর বিপরীতে পশ্চিমা দেশগুলোর বিকল্প অবকাঠামো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

‘একইভাবে, এই অঞ্চলের পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে উত্তরণের প্রতিশ্রুতিও বাস্তব প্রকল্পে রূপ নেয়নি, যা বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়, কারণ কয়লানির্ভর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কার্বন নিঃসরণের একটি দ্রুত বর্ধনশীল উৎস।’