শিরোনাম
ঢাকা, ১৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে একটি "মৈত্রী চুক্তি" স্বাক্ষর করতে বৃহস্পতিবার লন্ডন সফরে যাবেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ। এই উদ্যোগ ব্রিটেনের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ।
বার্লিন থেকে এএফপি জানায়, তারা ইউক্রেনের প্রতি চলমান সমর্থন নিয়েও আলোচনা করবেন। আশা করা হচ্ছে অন্যান্য ন্যাটো দেশের অর্থায়নে কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়ে লন্ডন ও বার্লিন উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ভূমিকা রাখবেন ।
এটি চ্যান্সেলর মের্জের যুক্তরাজ্যে প্রথম সফর। যদিও তিনি এর আগেও স্টারমারের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। যার মধ্যে একটি ছিল মে মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনে তাদের যৌথ সফর।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ব্রিটেনে রাষ্ট্রীয় সফরের এক সপ্তাহ পরে মের্জের এই সফর হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে যুক্তরাজ্য ব্লক ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে কোনও ইইউ রাষ্ট্রপ্রধানের এটিই প্রথম সফর।
জার্মানি ও ব্রিটেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত নতুন চুক্তিতে বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
চুক্তির খসড়ায় বলা হয়েছে, একটি দেশের জন্য কৌশলগত হুমকি অপর দেশের জন্যও সমান কৌশলগত হুমকি।
এছাড়াও সশস্ত্র আক্রমণের ক্ষেত্রে একে অপরকে সামরিক সহায়তাসহ সর্বতভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি থাকবে।
যদিও উভয় দেশ ন্যাটোর সদস্য হিসেবে পারস্পরিক প্রতিরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবুও নতুন চুক্তিটি সম্মিলিত অস্ত্র উন্নয়ন ও ন্যাটোর পূর্ব ফ্ল্যাংকে যৌথ অভিযানের পথ সুগম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুই দেশ ইতোমধ্যে গতবছরের অক্টোবরে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। গত মে মাসে ঘোষণা দেয় যে তারা দীর্ঘপাল্লার (২,০০০+ কিমি) স্ট্রাইক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে একসাথে কাজ করবে।
মের্জ ও স্টারমার বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেবেন যে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আগামী এক দশকের মধ্যে প্রস্তুত হবে। যুক্তরাজ্য থেকে জার্মানিতে প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়ে নতুন চুক্তিও ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে বোক্সার সাঁজোয়া যান ও টাইফুন যুদ্ধবিমান।
ব্রেক্সিটের ‘আঘাত’ কাটিয়ে ওঠা: চ্যান্সেলর মের্জের সঙ্গে সফর করছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল। তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
একটি জার্মান সরকারি সূত্র জানায়, ব্রেক্সিটের মতো একটি আঘাতমূলক অভিজ্ঞতার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক যেভাবে উন্নত হয়েছে, তা অবমূল্যায়ন করা ঠিক হবে না।
চুক্তিতে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ সহজ করার পদক্ষেপও থাকবে। যেমন বিদ্যালয়ভিত্তিক সফরের জন্য সীমান্ত পদ্ধতি সহজীকরণ।
দুই নেতা অবৈধ অভিবাসন রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপে সম্মত হবেন। যা উভয় নেতার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চুক্তি অনুযায়ী, মের্জের সরকার ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ অভিবাসন সহায়তা প্রদানকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করতে আইন সংশোধনের অঙ্গীকার করবে। এর আওতায় মানবপাচারকারীদের নৌকা গোপন রাখার গুদামঘরের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুক্তিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কেও অংশ থাকবে। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কৌশলগত ক্ষেত্রে সমন্বিত গবেষণা ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে। এছাড়াও নতুন যুক্তরাজ্য-জার্মানি বিজনেস ফোরাম গঠন করা হবে। যেখানে একাধিক জার্মান কোম্পানি ব্রিটেনে নতুন বিনিয়োগ ঘোষণা করবে। পরিবহন বিষয়েও দুই দেশ রেল যোগাযোগ উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।
গত মাসে ইউরোস্টার ঘোষণা করে, তারা ২০৩০-এর দশকের শুরুতে লন্ডন-ফ্রাঙ্কফুর্ট সরাসরি ট্রেন চালু করতে চায়। যা হবে যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মধ্যে প্রথম সরাসরি রেল যোগাযোগ ।