শিরোনাম
ঢাকা, ১০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): পূর্ব চীনের হাংঝো শহরের উপকণ্ঠে একটি উঁচু সিলিংযুক্ত ঘরে শ্রমিকরা চিমটা ব্যবহার করে ধাতব ট্র্যাক ধরে হিমশীতল সাদা বরফের বড় বড় টুকরো একটি রেফ্রিজারেটেড ট্রাকে তুলছেন।
হাংঝোউ, চীন থেকে এএফপি জানায়, চীনের একটি বরফ কারখানা ফেইচাও এর মালিক সান চাও এএফপিকে জানিয়েছেন যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহের কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বরফ বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহ আরও ঘন ও তীব্র হয়ে উঠছে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। চীনও তার ব্যতিক্রম নয়—২০২৪ সাল ছিল দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গরমের বছর। আর ২০২৫ সালও সেই ধারা অনুসরণ করছে।
গত সপ্তাহে চীনের পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত হাংঝোউ এর চেচিয়াং প্রদেশও তাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকির সতর্কতা জারি করা হয়।
বরফ কারখানা ফেইচাও এর মালিক সান চাও বলেন, বসন্ত, শরৎ ও শীতে তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি হলে বরফ বিক্রিতে তেমন প্রভাব পড়ে না । কিন্তু গ্রীষ্মে একটু গরম বেশি হলে বরফের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়।
ফেইচাও একটি ছোট-মাঝারি কারখানা, যারা বাজার, পণ্য পরিবহনকারী ও ইভেন্ট আয়োজকদের কাছে বরফ সরবরাহ করে।
সম্প্রতি চীনের একাধিক শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উপরে উঠে গেলে সান চাও এর মতো ব্যবসায়ীরা বিশাল আউটডোর ভেন্যু ঠান্ডা রাখতে বরফ সরবরাহ করেন।
প্রতিবেশী জিয়াংসু প্রদেশে এক ফুটবল ম্যাচের আয়োজকরা স্টেডিয়ামের চারপাশে ১০ হাজারেরও বেশি বিশাল বরফের ব্লক স্থাপন করেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্লোবাল টাইমস। ওই স্টেডিয়ামে প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার ফেইচাও কারখানায় ট্রাকে বরফ তুলতে দেখা যায়। সেই সময় আশপাশের একটি সামুদ্রিক খাবারের দোকান থেকে এক কর্মচারী হেঁটে এসে দুইটি বরফের ব্লক কিনে নেন। যার প্রতিটির দাম প্রায় ৩.৫০ ডলার। তিনি তা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিয়ে যান।
সান চাও বলেন, ‘মে ও জুন মাসে আমি প্রতিদিন প্রায় ১০০ টন বরফ বিক্রি করি। কিন্তু জুলাই মাসে সেটা বেড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টনে পৌঁছায়।
গত কয়েক বছরে চীন একের পর এক চরম গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়েছে। জুন মাসে রাজধানী বেইজিংয়ে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি উঠলে সেখানেও তাপপ্রবাহ সতর্কতা জারি করা হয়। একই মাসে দেশজুড়ে ১০২টি আবহাওয়া কেন্দ্র তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে গরম জুনের দিন রেকর্ড করে।
অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় গুইঝো প্রদেশে বন্যায় ছয়জন নিহত হন এবং ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।
চীন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম মূল কারণ। তবে চীন একইসাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রেও বিশ্বের অগ্রণী দেশ। যা সবচেয়ে দ্রুত গতিতে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা যুক্ত করছে।