বাসস
  ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৮:৫৫

যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিনে কূটনীতি ও ব্যবসায় মনোযোগ মাক্রোঁর

ঢাকা, ৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনটি বুধবার রাজনীতি, ব্যবসা ও কৌশলগত আলোচনায় মনোনিবেশ করেছেন। সফরের প্রথম দিন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাজপরিবারের উষ্ণ অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।

মঙ্গলবার রাজকীয় আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে মাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিত মাক্রোঁকে উইন্ডসর ক্যাসেলে স্বাগত জানানো হয়। ঘোড়ার গাড়িতে শোভাযাত্রা, ৪১ তোপধ্বনি এবং এক রাজকীয় ভোজ ছিল দিনটির মূল আকর্ষণ।

যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর থেকে এএফপি জানায়, বুধবার সকালে প্রেসিডেন্ট দম্পতি প্রথমে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। এরপর রাজা চার্লসের সঙ্গে উইন্ডসর ক্যাসেলের বাগানে হাঁটার ফাঁকে জীববৈচিত্র ইস্যুতে মতবিনিময় করেন।

এই সফরটি ফরাসি প্রেসিডেন্টের ২০০৮ সালের পর যুক্তরাজ্যে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর এবং ব্রেক্সিটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম যুক্তরাজ্য ভ্রমণ।

২০২৩ সালে রাজা চার্লসের ফ্রান্স সফর এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে ব্রেক্সিট-পরবর্তী উত্তেজনা প্রশমিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারকার সফরকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাতে উইন্ডসর ক্যাসেলে আয়োজিত ভোজসভায় রাজা চার্লস দুই দেশের মৈত্রীর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সম্পর্ক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তিনি ‘আঁতাঁত করদিয়াল’-এর পরিবর্তে ‘আঁতাঁত আমিকাল’ অর্থাৎ আরও গভীর ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলেন। জবাবে মাক্রোঁ দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রশংসা করেন।

এর আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে মাক্রোঁ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার রক্ষায় ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের যৌথ ভূমিকার ওপর জোর দেন।

বুধবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ছিল প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ এবং যুক্তরাজ্যের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মধ্যাহ্নভোজ। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সম্মেলন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, ফরাসি জ্বালানি কোম্পানি ইডিএফ ব্রিটেনের পূর্বাঞ্চলে নির্মীয়মাণ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘সাইজওয়েল সি’-তে ১২.৫ শতাংশ মালিকানা অর্জন করবে।

এছাড়া মাক্রোঁ ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক গবেষণা ও উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করেন এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বিখ্যাত ‘বায়ো টেপেস্ট্রি’র প্রদর্শনী শুরু করার ঘোষণা দেন। ঐতিহাসিক এই শিল্পকর্মে ১০৬৬ সালের নর্মান বিজয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাজ্য আশা করছে, এই সফরের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী হবে। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ২১ হাজারের বেশি অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে বলে রেকর্ড রয়েছে।

দিন শেষে লন্ডনের ঐতিহাসিক গিল্ডহলে এক ডিনারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে ম্যাক্রোঁর মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রায় ৬৫০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন।