বাসস
  ০৩ জুলাই ২০২৫, ২২:০৬

ট্রাম্পের বিতর্কিত ট্যাক্স বিল পাসে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হতে যাচ্ছে

ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : রিপাবলিকানদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও নানা বিতর্ক সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচিত ট্যাক্স ও ব্যয়সংক্রান্ত বিলের ওপর বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত ভোটাভুটি হতে যাচ্ছে।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, বিলটি হোয়াইট হাউসে পাঠানোর আগের শেষ প্রক্রিয়াগত বাধা দূর করতে বৃহস্পতিবার সকালে চূড়ান্ত ভোট হবে।

ক্যাপিটলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে স্পিকার জনসন বলেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রেসিডেন্টের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমরা এই ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ পাস করতে যাচ্ছি।

‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ হিসেবে খ্যাত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। তবে কিছু সংশোধনী থাকায় আবার নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে ফেরত এসেছে। এখানে পাস হলেই এটি আইনে পরিণত হবে।

তবে সিনেটে বিলটি পাস হতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির কয়েকজন সিনেটরই এটির বিপক্ষে ভোট দেন। এতে করে পক্ষে ৫০ এবং বিপক্ষে ৫০টি ভোট পড়ে। পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স নিজের টাই-ব্রেকিং ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সিনেটে এটি পাস করান।

এই বিলটি নিয়ে এখনও দ্বিধা রয়ে গেছে। হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে যে সব রিপাবলিকান রয়েছে তারাই বিলটি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন। কেননা এই বিল ধনীদের কর ছাড় দেবে। এতে সরকারের আয় কমবে। এ বিলের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বরাদ্দ, চিকিৎসা খাত ও অন্যান্য সামাজিক প্রোগ্রামের ব্যয় কমাবে ট্রাম্প প্রশাসন। এমনটি করলে সাধারণ মানুষ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, সেটি নিয়েও ভাবছেন তারা।

এই বিল পাস হলে তা ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ নীতির একটি বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হবে। যদিও রিপাবলিকানদের মধ্যেই অনেকে উদ্বিগ্ন। কেননা প্রস্তাবিত এই আইন একদিকে যেমন জাতীয় ঋণ অনেক বাড়িয়ে দেবে, অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংকটে ফেলবে।

বিলটিতে রয়েছে-সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসীদের ব্যাপক হারে বিতাড়নে অর্থায়ন এবং প্রথম মেয়াদের করছাড় নীতি আরও এগিয়ে নিতে ৪.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ।

তবে এই পরিকল্পনার ফলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি আরও ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি এতে ফেডারেল ফুড স্ট্যাম্প কর্মসূচি সংকুচিত করা হচ্ছে এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ১৯৬০-এর দশক থেকে চালু মেডিকেইড স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিতে কাটছাঁট করা হচ্ছে।

এই বিলের বিরুদ্ধে হাউসের ডেমোক্রেটিক নেতা হাকিম জেফরিস কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য দেন। তিনি বিলটিকে ‘একটি জঘন্য বিল’  ও ‘জনগণের জীবনমান উন্নয়ন নয়, বরং ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ’ বলে মন্তব্য করেন।

বিলটি মে মাসে হাউসে পাস হওয়ার পর গত মঙ্গলবার সিনেটে সংশোধিত হয়ে ফেরত আসে। সিনেট সংস্করণে এক ট্রিলিয়ন ডলার স্বাস্থ্য খাতে কাটছাঁট করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য বিমা হারাতে পারে এবং বহু গ্রামীণ হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হাউসে রিপাবলিকানদের একদল প্রতিনিধি আশঙ্কা করছেন, এত বড় সামাজিক কাটছাঁট তাদের নির্বাচনী সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে আর্থিক সংযমপন্থী রিপাবলিকানরা বলছেন, প্রতিশ্রুতির তুলনায় এই বিল পর্যাপ্ত সাশ্রয় আনতে পারবে না।

এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের ট্রুথ স্যোশাল প্ল্যাটফর্মে একাধিক পোস্টে রিপাবলিকানদের প্রতি কড়া বার্তা দেন। এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘রিপাবলিকানদের জন্য এটা হওয়া উচিত ছিল সহজ একটি ‘হ্যাঁ’ ভোট। যা হয়েছে, এটা হাস্যকর!’

এই বিলের মাধ্যমে ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির ওপর নিজের কর্তৃত্ব আরও একবার প্রমাণ করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সুপ্রিম কোর্টে সাম্প্রতিক জয় এবং ইসরাইল-ইরান যুদ্ধবিরতির মতো বড় কূটনৈতিক অর্জনের পর বিলটি তার দ্বিতীয় মেয়াদের এক বিশাল রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।