শিরোনাম
ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বাহিনী অন্তত ২৫ জনকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ১২ জন নিহত হয়েছেন একটি স্কুলে চালানো হামলায়। স্কুলটি যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রায় ২২ মাসে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং দুই মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। অনেকে স্কুলভবনে আশ্রয় নিলেও এসব ভবন বারবার ইসরাইলি হামলার শিকার হচ্ছে। ইসরাইল সেনাবাহিনী দাবি করে, এসব স্থানে হামাস যোদ্ধারা লুকিয়ে থাকে।
গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, গাজা শহরে সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়ির এএফপিকে বলেন, ‘একটি স্কুল-আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরাইলি বিমান হামলায় ‘অধিকাংশই নারী ও শিশুসহ ১২ জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।’ ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় অপহৃতদের মুক্তির লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ঘোষণা করেন এবং বলেন, এতে ইসরাইল সম্মত হয়েছে।
তবে, ইসরাইলি নেতারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য থেকে সরে আসেননি। যদিও মঙ্গলবার হামাস জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারীদের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে।
বৃহস্পতিবার ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলে এএফপির ধারণকৃত ফুটেজে দেখা যায়, ছোট ছোট শিশু পোড়া ধ্বংসাবশেষের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে। মৃতদেহের পাশ ঘেঁষে পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্রের মধ্যে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
আল-শিফা হাসপাতালে নিহতদের শোক জানাতে আসা উম্মু ইয়াসিন আবু আওদা বলেন, ‘এটা কোনো জীবন না। আমরা যথেষ্ট সহ্য করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর ধরে কেবল এক টুকরো রুটির জন্য লড়াই করছি। ইসরাইল চাইলে আমাদের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলুক, অন্তত একবারে শেষ হোক, না হয় মানবতার বিবেক জাগুক।’
সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা মুগাইয়ির আরও বলেন, গাজার কেন্দ্রে সহায়তা বিতরণস্থলের কাছে মানবিক সহায়তা প্রত্যাশীদের ওপর ইসরাইলি গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং ‘অনেক’ আহত হয়েছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় গোলাবর্ষণে তিনজন, জাবালিয়ায় এক ব্যক্তি এবং দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়শিবিরে হামলায় তিনজন নিহত হন।
গাজায় প্রবেশে সীমাবদ্ধতা এবং বহু এলাকায় পৌঁছানোর অসুবিধার কারণে সিভিল ডিফেন্সের দেওয়া তথ্য এএফপি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বাইত লাহিয়া, জাবালিয়া ও আল-মাওয়াসির ঘটনাগুলো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা এএফপিকে জানায়, তারা ‘হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে কাজ করছে’ এবং ‘নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা হচ্ছে’।
দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক মহলে যুদ্ধবিরতির আহ্বান বাড়লেও, কট্টর জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির বুধবার বলেন, ইসরাইলকে ‘আরও জোরালোভাবে অভিযান চালাতে হবে।’
তিনি এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গাজায় কাজটা শেষ করতে হবে। হামাসকে ধ্বংস করতে হবে, গাজা দখল করতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে স্থানান্তরে উৎসাহিত করতে হবে।’
বেন গভিরের মতে, হামাসকে পরাজিত করা গেলে গাজায় এখনও যেসব ইসরাইলি জিম্মি রয়েছে, তাদের মুক্ত করা সহজ হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হন, ইসরাইলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
জবাবে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭,০১২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে।