বাসস
  ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৩:১৯

ক্যালিফোর্নিয়ায় জাতিগত প্রোফাইলিংয়ে আতঙ্কিত ল্যাটিনো সম্প্রদায়

ঢাকা, ৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছাকাছি নিজের গাড়ি ধোয়ার কারখানায় গত মাসে ইমিগ্রেশন পুলিশের অভিযানের পর থেকে, জোস তার ১১টি নজরদারি ক্যামেরার ভিডিও ফিড সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করছেন।

ডাউনি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এএফপি জানায়, ফেডারেল এজেন্টদের ওই অভিযান ২৫ বছর বয়সী এই যুবককে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজের নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক জোস জানান, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অনেক অ-নথিভুক্ত ল্যাটিন আমেরিকান অভিবাসী কাজ করেন। তা আবারও নজরদারির লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

তিনি বলেন, এটা জাতিগত প্রোফাইলিংয়ের মতোই লেগেছে । এএফপিকে দেওয়া ফুটেজে দেখা যায়, ডাউনিতে অভিযানের সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা গাড়ি ধোয়ার কালো চামড়ার দুই কর্মীকে ধাওয়া করে আটক করেন।

অন্যদিকে, তাদের একজন সাদা সহকর্মী নির্বিঘ্নে গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করেন। তাকে কেউ থামায়নি।

জোস জানান, গ্রেপ্তার হওয়া দুই কর্মীর কারও বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না। এদের একজন প্রায় ২০ বছর ধরে গাড়ি ধোয়ার কাজ করছেন।

তিনি বলেন, সেদিন আমাদের দোকানে থাকা ১০ জনের কারোরই বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তারা চাইলে যেকোনো একজনকে ধরতে পারতেন। কিন্তু যাদের গায়ের রং তুলনামূলকভাবে গাঢ় তারাই ধরা পড়লেন। এটা নিছক কাকতালীয় নয়।

গত মাসে লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যাপক অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে শহরজুড়ে বিক্ষোভ হলেও, দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মার্কিন শহরে এখন তুলনামূলক শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদিও অভিযান থেমে থাকেনি।

ডাউনির কাছে মন্টেবেলোতে একটি অটো বডি শপে চালানো অভিযানে অভিবাসন কর্মকর্তাদের ব্যবহার ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভিডিওতে দেখা যায়, এক কর্মচারীকে গেটের সামনে ধাক্কা দেওয়া হয়। 

গ্রেপ্তারের সময় তিনি চিৎকার করে বলেন, ভাই, আমি আমেরিকান। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ডাউনির কাউন্সিলম্যান মারিও ট্রুজিলো (যিনি জুন মাসে প্রায় ১৫টি অভিযান নথিভুক্ত করেছেন) বলেন, ‘আমি মনে করি তারা জাতিগতভাবে মানুষকে টার্গেট করছে। যা সাংবিধানিকভাবে বেআইনি। তারা রাস্তায় মেক্সিকান চেহারার লোকদের খুঁজছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই অভিযোগ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, ত্বকের রঙের ভিত্তিতে কাউকে টার্গেট করার অভিযোগ আপত্তিকর এবং সরাসরি মিথ্যা। 

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি আমরা কাদের খুঁজছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন সড়ক থেকে সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের সরিয়ে নেওয়া।

তবে গত মাসে হওয়া গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে।

‘ডিপোর্টেশন ডেটা প্রজেক্ট’ নামের একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, ১ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস ও আশপাশের এলাকা থেকে ৭২২ জন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে ৬৯ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক সাজা ছিল না এবং ৫৮ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও আনা হয়নি।

একজন অধিকারকর্মী মন্তব্য করেন, এই প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারা বলেছিল তারা শুধু অপরাধীদের ধরবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা রাস্তায় হাঁটতে থাকা ল্যাটিনো চেহারার লোকদেরই ধরছে। এ কারণেই জনগণ ক্ষুব্ধ।

ক্যালিফোর্নিয়ার ছয়জন রিপাবলিকান স্টেট সিনেটর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,  সহিংস অপরাধীদের ধরার উদ্দেশ্যে চালানো অভিযানে অনেক নিরপরাধ অভিবাসীও ধরা পড়ছেন।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আইসিই অভিযান শুধু অননুমোদিত কর্মীদের মধ্যেই আতঙ্ক সৃষ্টি করছে না বরং বৈধ অভিবাসন স্ট্যাটাসধারী কর্মীদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করছে। ফলে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।

ডাউনিতে কয়েকজন ল্যাটিনো অভিবাসী এএফপিকে জানান, এখন তারা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কাগজপত্র সঙ্গে রাখেন। শুধু এই ভয়ে যে তাদের গায়ের রঙের কারণে পুলিশ তাদের থামাতে পারে।

২৩ বছর বয়সী এক মেক্সিকান নারী কর্মী (যিনি অন্য এক কার ওয়াশে কাজ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি নিয়েই বসবাস করছেন) বলেন, আমরা যারা স্থায়ী বাসিন্দা, তারাও এখন নিজেদের নিরাপদ মনে করি না।