শিরোনাম
ঢাকা, ৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : শুধু মুখরোচক খাবার হিসেবে নয়, বরং পরিবেশ রক্ষায় এক নীরব যোদ্ধা হতে পারে সামুদ্রিক ঝিনুক—এই বিশ্বাসে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যে বসবাসকারী কিম্বারলি প্রাইস নামের এক স্বেচ্ছাসেবক নিজ ঘরের পাশেই গড়ে তুলেছেন ঝিনুকের খামার।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ৫৩ বছর বয়সী প্রাইস ‘অয়েস্টার গার্ডেনার’ হিসেবে হাজার হাজার ঝিনুক লালন-পালন করছেন। এসব ঝিনুক পরে ওয়াশিংটনের কাছে চেসাপিক উপসাগরে সংরক্ষণ রিফে বসিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে প্রাকৃতিক জল পরিশোধক হিসেবে কাজ শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক ঝিনুক। প্রতিটি ঝিনুক দিনে গড়ে ৫০ গ্যালন বা ১৯০ লিটার পানি ছেঁকে পরিষ্কার করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝিনুকের এ ধরনের ছাঁকন ক্ষমতা শুধু পানি পরিশোধনই করে না, বরং জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং জলাশয়গুলোকে কার্বনডাই-অক্সাইড শোষণে সক্ষম করে তোলে—যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক।
তবে চেসাপিক উপসাগরে ১৮৮০ সালের আগের তুলনায় বর্তমানে মাত্র ১ শতাংশ প্রাকৃতিক ঝিনুক অবশিষ্ট আছে। দূষণ, রোগ এবং অতিমাত্রায় আহরণের কারণে এ পতন ঘটে।
ঝিনুকের সংখ্যা পুনরুদ্ধারে চেসাপিক বে ফাউন্ডেশন (সিবিএফ)-এর নেতৃত্বে একটি বৃহৎ কর্মসূচি চালানো হচ্ছে, যেখানে স্বেচ্ছাসেবীরা পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
প্রায় নয় মাস ধরে প্রাইসের মতো স্বেচ্ছাসেবকরা ছোট ঝিনুকগুলোকে নিজ ঘরের পিয়ারে ঝুলিয়ে রাখা খাঁচায় লালন করেন। প্রতি দুই সপ্তাহে খাঁচাগুলো পরিষ্কার করে তাতে জমা হওয়া অক্সিজেন-নিবৃত্তকারী জীবগুলো সরিয়ে ফেলেন, যাতে ঝিনুকগুলো বেড়ে ওঠে দ্রুত।
চলতি বছরের মে মাসের শেষদিকে এসব ঝিনুক ফেরত দেওয়া হয় সিবিএফকে, যারা সেগুলো উপসাগরের সুরক্ষিত রিফে স্থাপন করে। সেখানে ঝিনুক আহরণ নিষিদ্ধ।
২০১৮ সালে শুরু হওয়া এক প্রকল্পের আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ঝিনুক উপসাগরে পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ৬.৭ বিলিয়ন ঝিনুক বসানো হয়েছে বলে জানায় সিবিএফ।
সংস্থার ঝিনুক বিশেষজ্ঞ কেলি ফিয়ালা বলেন, ‘অগ্রগতি ইতিবাচক। আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি, তবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পৌঁছাতে পারব।’
একটি চ্যালেঞ্জ হলো—ঝিনুক বেড়ে উঠতে যে শক্ত পৃষ্ঠ (সাবস্ট্রেট) প্রয়োজন, তা অতীতে ড্রাইভওয়ে বা বাগানে ব্যবহারের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছিল। এখন সেই ঘাটতি পূরণে সংস্থাটি ‘রিফ বল’ নামের কৃত্রিম কংক্রিট-গঠন তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছে, যা ঝিনুকের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে।
স্কুলশিক্ষার্থী থেকে অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক—সব বয়সী মানুষ অংশ নিচ্ছে এই প্রকল্পে। প্রাইসের মতো স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের বাড়িতে লালন করা ঝিনুক সিবিএফ-এর কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। গড়ে প্রতি খাঁচায় প্রায় ৭৫০০ ঝিনুক জমা দেন প্রাইস, যা তিনি ‘খুব ভালো’ ফলাফল বলে মনে করেন।
সেসব ঝিনুক একটি ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় করে উপসাগরের এক সুরক্ষিত অংশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার দুটি ইন্টার্ন মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ২০টি পাত্র থেকে ৭৫,০০০ ঝিনুক পানিতে ফেলে দেন। প্রায় এক বছর লালিত এই প্রাণীগুলো এখন উপসাগরের পানি পরিশোধনে কাজ শুরু করবে।