শিরোনাম
ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস): এশিয়ার শেয়ারবাজারগুলো বুধবার বিশ্বব্যাপী ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রেখেছে, কারণ সাম্প্রতিক উপাত্তে দেখা গেছে যে মার্কিন অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ায় লি জে মিয়ং নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হওয়ায় দেশটির শেয়ারবাজার ও মুদ্রা 'উওন' শক্তিশালী হয়েছে।
হংকং থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনার জল্পনা বাণিজ্য উত্তেজনা হ্রাসের আশার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের অপরিকল্পিত ও হঠাৎ নেওয়া নীতিমালার কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল আমদানিতে বাড়ানো যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা বুধবারের পরে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
এশিয়ান বাজারের বিনিয়োগকারীরা ওয়াল স্ট্রিটের ইতিবাচক ধারা অনুসরণ করেছেন। যেখানে এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির সুযোগ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যাওয়ার তিনটি প্রধান সূচক বেড়েছে। এ তথ্য বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ওপর ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
এই তথ্যটি শুক্রবার প্রকাশিতব্য গুরুত্বপূর্ণ ‘নন-ফার্ম পে-রোলস’ (অকৃষি) পরিসংখ্যানের আগে এসেছে। যা মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ, দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শুল্কজনিত মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে তারা নিজেদের মুদ্রানীতির দিক নির্ধারণে এই তথ্যগুলোর ওপর নির্ভর করে থাকে।
এসপিআই’র অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেন, অর্থনীতির গতি আপাতত ভালো, তবে বছরের বাকি সময়টা ধীরে ধীরে অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। সবাই জানে, ফেড শেষ পর্যন্ত সুদের হার কমাবে। এটা আগে থেকেই ধরে নেওয়া হয়েছে, কেউ এতে অবাক হচ্ছে না, যদি না মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি স্থায়ী হয়ে ওঠে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের বরফ গলবে এই আশা শেয়ারবাজারকে টিকিয়ে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘যে শুল্ক একসময় ভয়ঙ্কর দানব মনে হতো, এখন তা যেন দাঁতহীন এক কুকুরের লেজ নাড়ানোর অবস্থা। যা বিনিয়োগকারীদের শান্ত রাখছে।’
চীন-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আলোচনা সম্ভাবনার কথা বলার পর বিনিয়োগকারীরা পরবর্তী অগ্রগতির জন্য অপেক্ষা করেেছ। যদিও ট্রাম্প সম্প্রতি বেইজিংকে পূর্ববর্তী সমঝোতা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।
এদিকে, ইউরোজোনে মে মাসে মুদ্রাস্ফীতি কমে আট মাসের সর্বনিম্নে চলে আসা এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২ শতাংশের নিচে নেমে আসা বাজারে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। টোকিও, হংকং, সাংহাই, সিডনি, ওয়েলিংটন, তাইপে, ম্যানিলা ও জাকার্তা সব বাজারেই সূচক ঊর্ধ্বমুখী।
সিউলে শেয়ারবাজার দুই শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং সর্বশেষ নিম্নতম পর্যায় থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ‘বুল মার্কেট’-এ প্রবেশ করেছে, কারণ লি জে-মিয়ং দক্ষিণ কোরিয়ার আকস্মিক নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। উওন মুদ্রা প্রায় ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই নির্বাচন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়েওলের সাময়িক মার্শাল ল-এর চেষ্টা ও অভিশংসনের পর ডাকা হয়েছিল। যা ছয় মাসের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার অবসান ঘটায়।
লি’র জয়ে আশাবাদ তৈরি হয়েছে যে তিনি রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য নতুন পদক্ষেপ নেবেন, বিশেষত ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতির মোকাবেলায়।
বুধবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নতুন রাষ্ট্রপতি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে সুরক্ষাবাদ দেশের ‘টিকে থাকার’ জন্য হুমকি। নির্বাচনী প্রচারণায় লি বলেছিলেন যে সিউলের ওয়াশিংটনের সাথে অবিলম্বে শুল্ক আলোচনা শুরু করা উচিত। তবে তিনি জোর দিয়েও বলেছেন যে কোনও চুক্তিতে তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।
প্রচারণার পথে, লি বলেছিলেন যে সিউলের ওয়াশিংটনের সাথে "অবিলম্বে" শুল্ক আলোচনা শুরু করা উচিত, তবে জোর দিয়েও বলেছেন যে কোনও চুক্তিতে তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।