বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১৪:৩৭

কানাডায় কড মাছ ধরা ফের শুরু, কাটেনি অনিশ্চয়তা

ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : প্রায় তিন দশক পর কানাডা আবারো বাণিজ্যিকভাবে কড মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আটলান্টিক মহাসাগরে মাছটির মজুদ সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার হয়নি। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ।

নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে কড মাছ ধরা এক সময় বড় অর্থনৈতিক খাত ছিল। শত শত বছর ধরে এটি স্থানীয় ও ইউরোপীয় জেলেদের জীবিকা নির্বাহের মূল উৎস ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত শিকার ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে ১৯৯২ সালে কড মাছ বিলুপ্তির শঙ্কা তৈরি হয়। তখন বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে কানাডা সরকার।

তখন এই নিষেধাজ্ঞা মাত্র দুই বছরের জন্য দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মাছের সংখ্যা না বাড়ায় তা চলে দীর্ঘ ৩২ বছর। এরই মধ্যে মজুদের ধীরগতির পুনরুদ্ধারের কারণে কর্তৃপক্ষ বারবার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে।

অবশেষে ২০২৪ সালে কিছুটা মাছের দেখা পাওয়ায় ফের ধরার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এখনো  আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে মাত্র ১৮ হাজার টন কড ধরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ, নিষেধাজ্ঞার আগে প্রতি বছর ১ লাখ ২০ হাজার  থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টন কড ধরা হতো।

গবেষক টাইলার এডি বলেন, ‘এত বছরের নিষেধাজ্ঞার পরও কড মাছ কেন পুরোপুরি ফেরেনি, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। এর পেছনে পানির তাপমাত্রা পরিবর্তনসহ অনেক কারণ থাকতে পারে।’

বর্তমানে প্রজনন উপযোগী কডের পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার টন। তবে এটা ১৯৮০ বা ১৯৬০-এর দশকের তুলনায় অনেক কম।

কড মাছের প্রধান খাবার ক্যাপলিন নামের আরেকটি ছোট মাছ। কিন্তু ক্যাপলিনের সংখ্যাও নব্বই দশকের পর তেমন বাড়েনি। বরং আনো কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিবেশবাদী রেবেকা শাইনস বলছেন, ‘এমন অবস্থায় কড মাছ ধরার পরিমাণ বাড়ানো উচিত হবে না। মাছটি এখনো ঝুঁকিতে আছে। তিনি আরো বলেন, “ক্যাপলিন বাড়ার এখনো কোনো সুখবর নেই।

তবে বড় নৌকার মালিকদের সংগঠন বলছে, মাছ ধরার পরিমাণ আরো বাড়ানো উচিত। সংগঠনের সভাপতি সিলভি লাপোইন্ট বলছেন, ৫০ হাজার টন কড ধরলেও তা বর্তমান মাছের সংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ হবে। ইউরোপের তুলনায় এটা অনেক কম।

তিনি আরো বলেন, ‘৩২ বছরে মাছ ধরার নিয়ম, প্রযুক্তি ও বাজার অনেক কিছুই বদলে গেছে। এখন আমরা অনেক বেশি দায়িত্বশীল।’

মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের মালিক আলবার্টো ওয়ারহ্যাম বলেন, নিষেধাজ্ঞায় ৩০ হাজার মানুষ কাজ হারায়। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠান টিকে ছিল ছোট নৌকায় ধরা মাছ ও বিদেশ থেকে আনা হিমায়িত মাছের কারণে।

তবে উপকূলের ছোট জেলেরা এখনো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, বড় নৌকা ফিরলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। জেলে অধিকারকর্মী লিলিয়ান সল বলেন, ‘বড় নৌকা দিয়ে একবারে যত মাছ ধরা সম্ভব, আমরা পুরো গ্রীষ্মেও তা ধরতে পারি না।’

তিনি চান, টেকসই ও নিয়ন্ত্রিতভাবে মাছ ধরা চলুক, যাতে অতীতের মতো বিপর্যয় না ঘটে।