বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১২:২৬

রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় তাৎক্ষণিক অগ্রগতি দেখছে না ক্রেমলিন

ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় শিগগির কোনো অগ্রগতি আশা করা উচিত নয় বলে মঙ্গলবার সতর্ক করেছে ক্রেমলিন। এর আগের দিন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মস্কো ইউক্রেনের পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

মস্কো থেকে এএফপি জানায়, মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘সমাধান অত্যন্ত জটিল এবং এতে বহু সূক্ষ্ম বিষয় জড়িত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাৎক্ষণিক কোনো সাফল্য বা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রত্যাশা করা অবাস্তব।’

ইস্তাম্বুলে প্রায় আড়াই ঘণ্টার আলোচনায় যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয়ে একমত হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন। পাশাপাশি উভয় দেশই একে অপরের কাছে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে, যেগুলোকে ‘স্মারকলিপি’ বলা হচ্ছে।

রুশ সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, মস্কো পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের চারটি দখলকৃত অঞ্চল থেকে কিয়েভের সেনা প্রত্যাহারকে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে উপস্থাপন করেছে। অঞ্চলগুলোকে রাশিয়া একতরফাভাবে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৈঠকে পূর্ণ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। রাশিয়ার প্রধান আলোচক জানিয়েছেন, কিয়েভের প্রস্তাবের জবাবে তারা ফ্রন্টলাইনের কিছু এলাকায় ২৩ দিনের জন্য আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন।

সম্ভাব্য শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কেও হতাশা প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন। পেসকভ বলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়া, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের বৈঠক কেবল তখনই সম্ভব, যখন দুই দেশের আলোচকরা একটি যৌথ খসড়া চুক্তিতে পৌঁছবে।’

তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি বৈঠকের বিষয়ে ‘উন্মুক্ত মনোভাব’ পোষণ করছেন, যা ইতোমধ্যে ইউক্রেন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টরাও সমর্থন করেছেন।

এদিকে মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, সীমান্তবর্তী সুমি শহরে রুশ বাহিনীর রকেট হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলাই প্রমাণ করে রাশিয়ার কথিত শান্তিচেষ্টার আসল রূপ।’

জেলেনস্কি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন ‘নির্ণায়ক পদক্ষেপ’ গ্রহণ করে রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই রাশিয়া নতুন অজুহাত দাঁড় করায়, যাতে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আমাদের প্রতিরক্ষায় অধিক সহায়তা জরুরি হয়ে পড়ে।’

খারকিভ অঞ্চলেও রুশ হামলায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের আন্দ্রিভকা গ্রাম দখল করেছে, যা রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

জেলেনস্কি এর আগে জানান, রাশিয়া ওই এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।

ইতোমধ্যে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ দাবি করেছে, তারা ক্রিমিয়া সেতুর একটি স্তম্ভে পানির নিচে স্থাপিত বিস্ফোরকের মাধ্যমে হামলা চালিয়েছে। হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনও স্পষ্ট না হলেও মঙ্গলবার সকালে কিছু সময়ের জন্য সেতুতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে তা পুনরায় চালু হয়।

জেলেনস্কির দপ্তর জানিয়েছে, একটি উচ্চপর্যায়ের ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তাদের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আর্থিক সহায়তা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি দ্রুত এ সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি রাশিয়ার ওপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।