বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১০:৫৯

গার্ট উইলডারস: ক্ষমতার জুয়ায় ঝুঁকিপ্রেমী 'ডাচ ট্রাম্প'

ঢাকা, ৪, জুন, ২০২৫ (বাসস) : ‘ডাচ ট্রাম্প’ নামে পরিচিত গার্ট উইলডারস তার সোনালি রঙে রঞ্জিত ঘনচুল ও আগ্রাসী বক্তব্যের জন্য যেমন পরিচিত, তেমনি তার ইসলামবিরোধী, অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী অবস্থান তাকে ডাচ রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এক বিতর্কিত জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

দ্য হেগ থেকে এএফপি জানায়, মরক্কানদের ‘ঘৃণ্য’ বলার মতো মন্তব্য থেকে শুরু করে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন—এই সব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের রাজনৈতিক ব্র্যান্ড, যার মূল প্রতিপাদ্য ‘ইসলামি আগ্রাসন ঠেকানো’।

২০০৪ সাল থেকে তিনি পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে আছেন। ইসলামবিরোধী বক্তব্য এবং হত্যার হুমকির কারণে তার চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়েছে। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বর্ণবাদী মন্তব্যের দায়ে, কিন্তু তিনি কখনোই পিছু হটেননি।

২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি চমকপ্রদ জয় পান, তার দল পিভিভি (ফ্রিডম পার্টি) ১৫০ আসনের সংসদে ৩৭টি আসন পেয়ে প্রথম অবস্থানে উঠে আসে। দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্ন অবস্থান থেকে মূল ধারার রাজনীতিতে ফেরেন তিনি।

নির্বাচনের সময় উইলডারস তার তীব্র অভিবাসনবিরোধী অবস্থান কিছুটা নরম করেন। শেষ নির্বাচনী বিতর্কে তিনি বলেন, 'আশ্রয়প্রার্থীদের ঢল মোকাবিলার চেয়ে বড় সমস্যা রয়েছে।' তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, যদি তাকে 'লিটল টাওয়ারে'—ডাচ প্রধানমন্ত্রীর অফিসে—প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, তাহলে তিনি ইসলামবিরোধী বক্তব্যকে ‘ফ্রিজে’ রাখবেন।

তবে ডাচ রাজনীতির সমঝোতা-নির্ভর কাঠামোতে কোনো একক দল ক্ষমতা দখল করতে পারে না। উইলডারসের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে আপত্তি তোলেন জোটসঙ্গী অন্য দলগুলোর দুই নেতা। অবশেষে তিনি পদ ছাড়েন এবং এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, 'আমার দেশপ্রেম এবং ভোটারদের প্রতি ভালোবাসা আমার ব্যক্তিগত অবস্থানের চেয়ে বড়।'

সমঝোতার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন আমলাতান্ত্রিক পটভূমির ডিক স্কোফ। সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর আশ্রয়নীতি প্রণয়ন। তবে উইলডারসের স্বপ্ন ছিল অধরাই।

তিনি সুযোগ পেলেই তার ইসলামবিরোধী বক্তব্য পুনরুজ্জীবিত করেন। এক ভাষণে বলেন, 'পশ্চিম ইউরোপের রাস্তায় হাঁটলে মনে হয় যেন মধ্যযুগীয় আরব শহর—হিজাব আর বোরকায় ভরা।' তিনি দাবি করেন, 'ইসলাম ও স্বাধীনতা একসঙ্গে চলতে পারে না।'

১৯৬৩ সালে দক্ষিণের শহর ভেনলোতে জন্ম উইলডারসের। তার মা ছিলেন আধা-ইন্দোনেশীয়। তার বড় ভাই পল উইলডারস জার্মান সংবাদমাধ্যম ডার শ্পিগেলকে বলেন, 'সে তখন একেবারে বর্ণবাদী ছিল না। রাজনীতির খেলা, প্রভাব ও ক্ষমতার সংগ্রামই তাকে আকৃষ্ট করত।'

ইসরাইলে একটি কিবুতসে সময় কাটানো এবং ডাচ রাজনীতিক পিম ফোরটাইনের (২০০২) ও চলচ্চিত্র নির্মাতা থিও ফান গখের (২০০৪) হত্যাকাণ্ড তার মনোভাব পাল্টে দেয়। ২০১২ সালে প্রকাশিত এক বইয়ে তিনি লিখেছেন, 'আমি ভয়ে নয়, ক্ষোভে কেঁপে উঠেছিলাম।'

উইলডারস তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন উদারপন্থী দল ভিভিডি'র মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে। পরে ২০০৬ সালে দল ত্যাগ করে গঠন করেন নিজের দল পিভিভি। ২০১৭ সালে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ২০২১ সালে তৃতীয় বৃহত্তম হয়।

তবে তার দল কার্যত এক সদস্যেরই—শুধু উইলডারস নিজেই।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে তিনি জনজীবনে খুব কমই দেখা দেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক হাঙ্গেরীয় নারীকে বিয়ে করলেও তাদের কোনো সন্তান নেই। কখনো ইসলামবিরোধী পোস্ট, আবার কখনো বিড়ালের ছবি—এই দুই ধারায় তার সামাজিকমাধ্যম উপস্থিতি সীমাবদ্ধ।

তার ভাই বলেন, “গার্টের জীবন এখন খুব ছোট হয়ে গেছে—পার্লামেন্ট, জনসভা আর তার অ্যাপার্টমেন্ট। অন্য কোথাও সে যেতে পারে না।”