বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১০:৫৩

ভেঙে গেল ডাচ সরকার : অভিবাসন ইস্যুতে কট্টর ডানপন্থী 'ডাচ ট্রাম্প’-এর জোট ত্যাগ

ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : অভিবাসন নীতি কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে কট্টর ডানপন্থী নেতা 'ডাচ ট্রাম্প’ হিসেবে পরিচিত গির্ট উইল্ডারস মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের জোট সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এতে দেশটির জোট সরকার ভেঙে পড়েছে। এর ফলে দেশটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এবং নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

দ্য হেগ থেকে এএফপি জানায়, উইল্ডারসের এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন কয়েক সপ্তাহ পর নেদারল্যান্ডসে একটি ন্যাটো সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং একটি প্রধান রপ্তানিকারকের জন্য এটি এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির সূচনা করেছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সহজ জয় পাওয়া উইলডারসের দল পিভিভি (ফ্রিডম পার্টি) অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু সে নীতির বাস্তবায়নে ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা থেকে নিজ দলের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

জোট সরকারের চার দলের মধ্যে অভিবাসন নীতির ওপর আপসের চেষ্টা চললেও শেষ পর্যন্ত ফল আসেনি। চারদলীয় জোট রক্ষায় শেষ মুহূর্তের এক উত্তপ্ত বৈঠকের পর উইল্ডারস সাংবাদিকদের জানান, 'আমার ধৈর্য ফুরিয়ে গেছে।' তিনি তার মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না বলে জানান।

তিনি বলেন, 'আমি কঠোরতম আশ্রয়নীতি বাস্তবায়নের জন্য সই করেছিলাম, নেদারল্যান্ডস ধ্বংস করার জন্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ উইল্ডারসের সিদ্ধান্তকে 'অপ্রয়োজনীয় ও দায়িত্বহীন' আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তিনি রাজা উইলেম-আলেকজান্ডারের কাছে পিভিভির মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।

তিনি বলেন, 'যতক্ষণ না একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, আমি তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাব, কেননা নেদারল্যান্ডস ও বৈশ্বিক জীবন তো থেমে থাকে না।'

উইল্ডারস পূর্বে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে ‘কঠোরতম অভিবাসন নীতি’ বাস্তবায়নে সম্মত হলেও সম্প্রতি তিনি অভিযোগ করেন, এই নীতির বাস্তবায়ন খুব ধীরগতিতে হচ্ছে।

১৮ মাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইউরোপজুড়ে আলোড়ন তোলা নিরঙ্কুশ জয়ের পর এখনও জরিপে পিভিভি-ই সবচেয়ে শক্তিশালী দল। তবে ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক সহসভাপতি ফ্রান্স টিমারমান্সের নেতৃত্বাধীন গ্রিন/লেফট দল তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে।

দেশটির প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত উদারপন্থী ভিভিডি পার্টিও শীর্ষ দুই দলের কাছাকাছি রয়েছে, ফলে সম্ভাব্য নতুন নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রূপ নিতে পারে।

ভিভিডি নেত্রী দিলান ইয়েসিলগোজ উইল্ডারসের পদক্ষেপকে 'চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে উল্লেখ করে বলেন, 'তুমি নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে এমন করতে পারো কীভাবে?'

অ্যামস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিভাজন বিষয়ক অধ্যাপক সারাহ ডি লাঙ্গে বলেন, গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

তিনি বলেন, 'নতুন নির্বাচন খুবই সম্ভাব্য, কিন্তু নেদারল্যান্ডসে নির্বাচন আয়োজন করতে প্রায় তিন মাস লাগে। তাৎক্ষণিক নির্বাচন এখানে অন্যান্য দেশের মতো দ্রুত হয় না।'

মে মাসের শেষ দিকে উইল্ডারস এক আকস্মিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, স্কোফ সরকারের প্রতি তার ‘ধৈর্য ফুরিয়ে গেছে’।

তিনি হুঁশিয়ারি দেন, তার ১০ দফা নতুন পরিকল্পনা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে তিনি জোট ভেঙে দেবেন।

উইল্ডারসের পরিকল্পনায় ছিল আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ, সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধে দণ্ডিত দ্বৈত-নাগরিকদের বহিষ্কার।

রাজনৈতিক ও আইন বিশেষজ্ঞরা এই পরিকল্পনাকে অকার্যকর কিংবা বেআইনি হিসেবে মন্তব্য করেন। তাদের অনেকেই মনে করছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে সরকার পতনের জন্যই উইল্ডারস এই সংকট তৈরি করেছেন।

কট্টর অভিবাসনবিরোধী মনোভাব ও স্বতন্ত্র চুলের স্টাইলের জন্য উইল্ডারসকে অনেক সময় ‘ডাচ ট্রাম্প’ বলা হয়।

নির্বাচনে জয়ের পরও তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা ভেস্তে যায়, কারণ জোটসঙ্গীরা তার নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করেন এবং আপোসের প্রার্থী হিসেবে ডিক স্কোফকে মনোনীত করা হয়।

জোটের চার দলের নেতারা মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব না নিয়ে সংসদীয় দলনেতা হিসেবেই কাজ চালিয়ে যান।

সংসদে উইল্ডারসের দৃঢ় অবস্থান এবং টিমারমান্সের সঙ্গে তার তীব্র তর্ক অনেক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তিনি বারবার বলেছেন, তার অভিবাসনবিরোধী নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে তাকেই প্রধানমন্ত্রী হতে হবে।

তবে নেদারল্যান্ডসের খণ্ডিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কোনো দলই ১৫০ আসনের পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না, ফলে উইল্ডারসের সঙ্গী প্রয়োজন হবে।

তিনি কৃষকদল বিবিবির সমর্থন পেতে পারেন। তবে ভিভিডির সমর্থন—যা আগে জোটসঙ্গী ছিল—ততটা নিশ্চিত নয়।

বর্তমান জোটের চতুর্থ দল ‘নিউ সোশ্যাল কনট্র্যাক্ট’-এর জনপ্রিয়তা নেতানিয়কভাবে কমেছে, বিশেষ করে তাদের আকর্ষণীয় নেতা পিটার ওমটসিগ্ট পদত্যাগ করার পর।

সারা ইউরোপেই কট্টর ডানপন্থীদের উত্থান দেখা যাচ্ছে। মে মাসে পর্তুগালে চেগা (‘এনাফ’) দল দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে।

জার্মানিতে অভিবাসনবিরোধী কট্টর ডান দল আফডি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে ২০.৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

এদিকে যুক্তরাজ্যে নাইজেল ফারাজের কট্টর ডানপন্থী রিফর্ম ইউকে দল স্থানীয় নির্বাচনে অগ্রগতি দেখিয়ে জাতীয় রাজনীতিতেও উল্লেখযোগ্য উত্তরণ ঘটাচ্ছে।