শিরোনাম
ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী নেতা কারোল নাওরকির বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক তার ইউরোপপন্থী সরকারের প্রতি সংসদীয় সমর্থন যাচাইয়ে আস্থা ভোটের আহ্বান জানিয়েছেন।
ওয়ারশ থেকে এএফপি জানায়, ৪২ বছর বয়সী নাওরকিকে ইউরোপের কট্টর ডানপন্থী নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক নাওরকি ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি গর্ভপাত ও সমকামী অধিকার নিয়ে সরকারের প্রগতিশীল নীতির বিরোধিতা করবেন।
রোববার অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার ভোটে নাওরকি ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। টাস্কের উদারপন্থী মিত্র রাফাল ত্রাশকোভস্কি পান ৪৯ শতাংশ।
এক টেলিভিশন ভাষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক প্রধান টাস্ক বলেন, তিনি 'শিগগিরই' আস্থা ভোট চান এবং পদে থাকার অঙ্গীকার করেন।
তিনি বলেন, 'এই নির্বাচন কিছুই বদলাবে না।এই মন্তব্য আসার কিছুক্ষণ আগে বিরোধী আইন ও ন্যায় (পি’আই’এস) দলের নেতা ইয়ারোসওয়াফ কাঝিনস্কি দাবি করেন, 'জনগণ তাকে (টাস্ককে) লাল কার্ড দেখিয়েছে।' তিনি একটি 'টেকনোক্র্যাট সরকার' গঠনের আহ্বান জানান যা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হবে।
নাওরকি বলেন, তিনি এমন এক পোল্যান্ড চান, 'যেটি আন্তর্জাতিক, ইউরোপীয় ও ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি আপনাদের মর্যাদার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উপস্থাপন করব, নিশ্চিত করব যে পোল্যান্ডকে সমান মর্যাদায় বিবেচনা করা হয়।'
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নাওরকির প্রেসিডেন্সি ব্রাসেলসের সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আইনের শাসন ইস্যুতে নতুন করে টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে পারে এবং ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করে তুলতে পারে। কারণ তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদে প্রবেশে বিরোধিতা করেন এবং ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য সুবিধা কমিয়ে দেওয়ার পক্ষে।
বিশ্লেষক পিওত্র বুরাস বলেন, 'নাওরকির প্রেসিডেন্সি টাস্ক সরকারের জন্য এক কঠিন পথ তৈরি করবে।'
তিনি বলেন, 'নতুন প্রেসিডেন্ট সরকারকে উৎখাত করতে চান।' তিনি এএফপিকে আরও বলেন, :এই নির্বাচনের ফলাফল সম্ভবত আগাম সংসদীয় নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে পারে—হয়তো এই বছর না হলেও আগামী বছর।'
২০২৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে টাস্ক সরকারের বিভিন্ন সংস্কার পরিকল্পনা থমকে আছে প্রেসিডেন্টের ভেটোর কারণে, যিনি এবার নাভরকিকে সমর্থন দিয়েছেন।
এছাড়া, টাস্কের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অভ্যন্তরেও মতবিরোধ রয়েছে, যা বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের ফলাফলে আরও প্রকট হতে পারে।
উল্লেখ্য, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সংসদীয় আইন প্রস্তাবে গুরুত্বপূর্ণ ভেটো ক্ষমতা রাখেন।
নাভরকির বিজয়ে ইউরোপের কট্টর ডানপন্থী নেতারা দ্রুত অভিনন্দন জানান।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান একে 'চমৎকার জয়' আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, 'আপনার সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছি।'
ফ্রান্সের কট্টর ডান নেত্রী মারিন ল্য পেন একে 'সুখবর' বলে স্বাগত জানান। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি 'শুভেচ্ছা' জানিয়ে বলেন, 'আমাদের দেশগুলোর মধ্যে একই মূল্যবোধ বিদ্যমান।'
ট্রাম্পও নাভরকিকে বিজয়ী হিসেবে অভিনন্দন জানান—:অভিনন্দন পোল্যান্ড, তোমরা একজন বিজয়ীকে বেছে নিয়েছ!'
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের প্রতিক্রিয়া ছিল আরও সংযত।
ইইউ কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন ডের লায়েন বলেন, তিনি 'আশাবাদী' যে ওয়ারশর সঙ্গে 'চমৎকার সহযোগিতা' অব্যাহত থাকবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আহ্বান জানান, নাওরকি যেন 'আইনের শাসনকে সম্মান করে একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ও প্রতিযোগিতামূলক ইউরোপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেন।'
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক অভিনন্দন বার্তায় বলেন, 'পোলিশ জনগণ শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ও সীমানা সুরক্ষায় রায় দিয়েছে।'
নাওরকির অনেক সমর্থক বলেন, তারা আশা করছেন নতুন প্রেসিডেন্ট অভিবাসন রোধে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে পোল্যান্ডের অধিক সার্বভৌমত্বের পক্ষে কাজ করবেন।
নির্বাচনী প্রচারে তিনি প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীর উপস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরাজমান ক্ষোভকে কাজে লাগান।
ভোটগ্রহণের আগের ঘণ্টাগুলোতে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের হাতে নিহত পোলিশদের একটি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেন।
ত্রাশকোভস্কির সমর্থক ৬৫ বছর বয়সী উদ্যানকর্মী জ্দজিস্লাও ব্রোজেক বলেন, 'তারা (নাওরকির দল) সবকিছুই ঠেকাবে, আইন ঠেকাবে, সিদ্ধান্ত ঠেকাবে। আমি বিশৃঙ্খলা আশঙ্কা করছি।'
৪৫ বছর বয়সী প্রচারক তমাশ শিপুলা বলেন, 'এই ফলাফল এলজিবিটিকিউ জনগণের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও পাঁচ বছর পিছিয়ে দিল।' তিনি একে 'বেদনাদায়ক উপলব্ধি' বলে উল্লেখ করেন।
নাওরকি বলেন, তিনি সমলিঙ্গ সম্পর্কের বিরোধী এবং এপ্রিল মাসে বলেছিলেন, 'এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায় আমার কাছ থেকে কোনো প্রত্যাশা করতে পারে না।'
তিনি পোল্যান্ডের প্রায় সম্পূর্ণ গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞারও সমর্থক, ঘোষণা দিয়েছেন, 'আমি জীবন রক্ষার পক্ষে।'
তবে তার প্রচারাভিযান ঘিরে বিতর্কও কম ছিল না—একটি সন্দেহজনক ফ্ল্যাট কেনা, ফুটবল ভক্তদের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং অতীতে যৌনকর্মী সরবরাহের অভিযোগ উঠে আসে।
অপেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা নাভরকি অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।