শিরোনাম
ঢাকা, ২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসা ক্ষুধার্ত ও অনাহারি ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের এলোপাতাড়ি গুলির ঘটনায় প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ২শ’ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
মিডল ইস্ট মনিটর এর উদ্ধৃতি দিয়ে সিনহুয়া এ খবর জানায়।
গতকাল রোববার ভোরে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ত্রাণ সহায়তা গ্রহণের জন্য জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির উপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে ইসরাইলি বাহিনী।
এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজার তথাকথিত ত্রাণ কেন্দ্রগুলো ইসরাইলি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণহত্যা চালাতে ইসরাইলি বাহিনী ত্রাণ বিতরণের নামে নতুন কৌশল কাজে লাগাচ্ছে।
ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর ওপর চালানো গণহত্যায় নীরবতা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বারশ। অবরুদ্ধ উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকটে আছেও বলে জানান মুনির।
জাতিসংঘ ও একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে সতর্ক করে জানায়, গাজায় চরম খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে গাজায় অনাহার, অপুষ্টি ও মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহভাবে বেড়েছে।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে অনাহারে ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। যা এখন শতভাগে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওসিএইচএ) বলেছে, গাজা ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থানে’ পরিণত হয়েছে এবং অবরুদ্ধ এই উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। সংস্থাটির মুখপাত্র জেন্স লারকে জানান, গাজায় শতভাগ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস মানবিক সাহায্যের জন্য আসা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তের জন্য জাতিসংঘের প্রতি একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ অবরুদ্ধ গাজা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য মানবিক সাহায্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
এদিকে সিএনএন-এর একটি ভিডিও’তে দেখা গেছে রাস্তায় পড়ে থাকা আটা তুলে নিচ্ছিলেন এক মা। আল্লাহর কাছে বিচার চাইলেন ইসরাইলিদের নৃশংসতার
অবরুদ্ধ গাজায় শুধু ফিলিস্তিনিদের প্রাণে মেরেই থামছে না দখলদার ইসরাইল, সেখানকার বাসিন্দাদের ঠেলে দেয়া হয়েছে দুর্ভিক্ষের মুখেও। ইসরাইলি অবরোধে সব হারানো অসহায় ফিলিস্তিনিরা এখন পড়েছেন তীব্র খাদ্য সংকটেও। তারই এক দৃশ্য যেন দেখা গেল উপত্যকাটির খান ইউনিসে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, কাঁদতে কাঁদতে রাস্তা থেকে ময়লাযুক্ত আটা তুলে নিচ্ছেন এক নারী। আটার বস্তা না পাওয়ায় রাস্তায় পড়ে থাকা আটাই কুড়িয়ে নিতে থাকেন তিনি।
কিন্তু নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে একপর্যায়ে কাঁদতে শুরু করেন ওই নারী। চিৎকার করে আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার দেন। ভিডিওটি প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলেছে, গেল ৩১ মে গাজার এক মায়ের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে খান ইউনিসে।
ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। সবকিছু সুন্দরভাবে সমাধান করার ক্ষমতা তার আছে। তোরা (ইসরাইলকে উদ্দেশ্য করে) আমাদের অভুক্ত রেখেছিস, কুকুর।
এরপর আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিচার দিয়ে তিনি বারবার বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ আরবদের বিচার করুক।’
সিএনএন জানিয়েছে, ইসরাইল গাজায় অবরোধ আরোপ করে রাখায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে আসছে। যার চিত্র এখন ফুটে উঠছে। যদিও অনেকের মতে, গাজায় ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ চলছে।