বাসস
  ০১ জুন ২০২৫, ১৬:৪৮

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকিতে উপসাগরীয় অঞ্চলের শ্রমিকরা : এইচআরডব্লিউ

ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : উপসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় অভিবাসী শ্রমিকরা ঝুঁকিতে পড়ছেন বলে রবিবার সতর্ক করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সংস্থাটি শ্রমিকদের রক্ষায় দেশগুলোকে অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

বৈরুত থেকে এএফপি জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতে অভিবাসী শ্রমিকরা মোট শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ। এসব বিশ্বের সবচেয়ে গরম অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত। গ্রীষ্মে এসব দেশে তাপমাত্রা প্রায়ই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)-এর কাছাকাছি পৌঁছায়।

এইচআরডব্লিউ-এর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপপরিচালক মাইকেল পেইজ বলেন, “প্রতি গ্রীষ্মে দেখা যায়, জলবায়ু সংকট শ্রমিকদের জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সংকটকে আরও তীব্র করে তোলে। কোটি কোটি অভিবাসী শ্রমিক মারাত্মক গরমে ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছে।”

তিনি আরও বলেন, “প্রমাণভিত্তিক শ্রমিক-সুরক্ষায় গড়িমসি করার কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোতে শ্রমিকরা অপ্রয়োজনে মারা যাচ্ছে, কিডনি বিকল হচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।”

ধনী উপসাগরীয় দেশগুলো বিশেষ করে নির্মাণ খাতে ভারত ও পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল।

গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মে মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরপর দ্বিতীয় দিন অতিক্রম করে ৫১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে।

শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য এসব দেশ প্রতিবছর জুনের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ‘মধ্যাহ্নকালীন বিরতি’ নীতির আওতায় খোলা জায়গায় ও সরাসরি রোদে কাজ নিষিদ্ধ করে।

তবে উপসাগরীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এইচআরডব্লিউ বলেছে, 'এই চরম তাপপ্রবাহ এখন মে মাসেই শুরু হচ্ছে, যখন এই নীতি কার্যকর হয় না।'

কুয়েতে কর্মরত এক ইলেকট্রিশিয়ান নিউইয়র্কভিত্তিক এই অধিকার সংস্থাকে বলেন, গ্রীষ্মে কাজ করার সময় তিনি অনেকবার মাথা ঘোরা, বমি, মাথাব্যথা ও ঝাপসা দৃষ্টির অভিজ্ঞতা পেয়েছেন এবং 'অনেকে গরমে অজ্ঞান হয়ে পড়েন'।

এইচআরডব্লিউ দেশগুলোর সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ক্যালেন্ডার-ভিত্তিক মধ্যাহ্ন নিষেধাজ্ঞা’ থেকে বের হয়ে ঝুঁকিভিত্তিক তাপমাত্রা নির্ধারণ ও ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।

বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ঘন ঘন ঘটে যাওয়া তাপপ্রবাহ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং এসব তাপপ্রবাহ ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন, দীর্ঘমেয়াদি ও তীব্র হবে।

গত তিন দশকে বিশ্বব্যাপী চরম গরমের দিনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব দেশগুলোতে খোলা আকাশের নিচে কর্মরত শ্রমিকরা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপজনিত চাপের সম্মুখীন হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অঞ্চলের ৮৩.৬ শতাংশ শ্রমিক অতিরিক্ত তাপমাত্রার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হন।