শিরোনাম
ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ চক্র ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোর বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের অভিযোগে জর্জরিত মেক্সিকোতে রোববার এক নজিরবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির সাধারণ ভোটাররা দেশের সকল স্তরের বিচারপতি নির্বাচন করছেন।
মেক্সিকো সিটি থেকে এএফপি জানায়, সরকার বলছে, এ সংস্কারের মাধ্যমে বিশ্বে একমাত্র মেক্সিকো এমন দেশ হয়ে উঠছে যেখানে সব বিচারপতি ও ম্যাজিস্ট্রেট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এর পেছনে যুক্তি— সমাজের গভীরে শেকড় গাড়া দুর্নীতি ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি নির্মূল।
তবে, এই পদ্ধতিতে বিচার বিভাগকে রাজনীতিকরণের শঙ্কা দেখা দিয়েছে, এবং একইসঙ্গে আদালতগুলোতে অপরাধীদের হুমকি ও ঘুষের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘের বিচারপতি ও আইনজীবীদের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত মার্গারেট স্যাটারথওয়েট বলেন, 'যদিও দুর্নীতি আগে থেকেই রয়েছে, তবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে নির্বাচনের পদ্ধতি অপরাধী চক্রের কাছে আরও সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারে।' তিনি বলেন, 'এই পদ্ধতিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচনের ঝুঁকি তৈরি হয়।'
ভোটের আগে সাধারণত রাজনীতিকদের লক্ষ্য করে যে ধরনের সহিংসতা দেখা যায়, এবারের নির্বাচনের আগে তা ঘটেনি। তবে, নির্বাচনের নেপথ্যে মাদক চক্রগুলোর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলেছে বলেই মনে করছেন, দেশটির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বর্তমানে কনসালটিং প্রতিষ্ঠান ইন্টেগ্রালিয়ার মহাপরিচালক লুইস কার্লোস উগালদে।
তিনি বলেন, 'যেসব বিচারক বা প্রার্থী অপরাধী চক্রের স্বার্থের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই তো স্বাভাবিক।
প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের কার্যালয়ের আইনজীবী কারলোটা রামোস বলেন, অপরাধী চক্রের প্রভাব একটি বাস্তব ও বহুদিনের সমস্যা, যা আগে ‘অদৃশ্য’ ছিল। নতুন ব্যবস্থায় বিচারক বা বিচারপতি প্রার্থীদের ওপর জনচক্ষুর নজরদারি থাকবে।
বিতর্কিত প্রার্থী
মানবাধিকার সংগঠন ডিফেনসোরক্স এমন অন্তত ২০ জন প্রার্থীর নাম চিহ্নিত করেছে, যাদের ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আছেন সিলভিয়া ডেলগাডো, যিনি মাদকসম্রাট জোয়াকিন ‘এল চাপো’ গুজমানের আইনজীবী ছিলেন।
ডেলগাডো চিহুয়াহুয়া রাজ্যে বিচারপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, 'প্রত্যেকেরই আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার আছে।'
নুভো লেওন রাজ্যে বিচারপতি পদে দাঁড়ানো ফার্নান্দো এসকামিলা ‘লস জেতাস’ কার্টেলের সাবেক নেতা মিগেল অ্যাঞ্জেল ত্রেভিনোর আইনজীবী ছিলেন।
ডুরাঙ্গো রাজ্যের আরেকজন প্রার্থী লেওপোলদো চাভেজ মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ছয় বছর জেল খেটেছেন। এক ভিডিওতে তিনি বলেন, 'আমি নিজেকে কখনো নিখুঁত প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরিনি।'
‘ভালো সুনাম’
রোববার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ প্রায় ৮৮০ জন ফেডারেল বিচারক নির্বাচন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে আরও কয়েকশ’ স্থানীয় বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেটও নির্বাচিত হবেন। বাকি বিচারপতিদের নির্বাচনে ২০২৭ সালে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রার্থীদের জন্য আইন ডিগ্রি, আইনি অভিজ্ঞতা, ‘ভালো সুনাম’ এবং অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকার শর্ত নির্ধারিত আছে।
নির্বাচনের জটিলতা নিয়ে অনেক ভোটারই সংশয়ে রয়েছেন। 'আমরা তো জানিই না ভোটকেন্দ্র কোথায়,' বলেন ৬৩ বছর বয়সী আইনজীবী তেরেসা ভারগাস।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড শার্ক বলেন, 'সঠিকভাবে ভোট দিতে চাইলে ভোটারদের শত শত প্রার্থীর অতীত রেকর্ড ও প্রোফাইল ঘেঁটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হবে।'
তার মতে, মেক্সিকোর বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতির সবচেয়ে বড় ঘাঁটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কৌঁসুলিদের কার্যালয়। 'আসলে কৌঁসুলিকে ঘুষ দিয়ে কোনো অভিযোগই না আনা সহজ, আদালতে গিয়ে বিচারককে প্রভাবিত করা বরং এর চেয়েও কঠিন,' বলেন তিনি।
এই বিচারিক সংস্কারের পেছনে আছেন শেইনবাউমের পূর্বসূরি ও রাজনৈতিক গুরু আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেস ওব্রাদোর। তিনি প্রায়ই বিচার বিভাগের সঙ্গে সংঘাতে যেতেন এবং আদালতগুলোকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতদের সেবায় নিয়োজিত বলে দাবি করতেন।
অধ্যাপক ডেভিড শার্ক মন্তব্য করেন, 'এই নির্বাচনগুলো আয়োজনের প্রধান কারণ সম্ভবত বিচারকদের প্রতি ওব্রাদোরের ক্ষোভ।'