শিরোনাম
ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোল্যান্ডের অবস্থান, নারী ও এলজিবিটিকিউ অধিকারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে—এমন এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রোববার ভোট দিচ্ছেন পোলিশ নাগরিকরা।
ওয়ারশ থেকে এএফপি জানায়, নির্বাচনে ওয়ারশর ইউরোপপন্থী মেয়র, মধ্যপন্থী সরকারদলীয় গুরুত্বপূর্ণ মিত্র রাফাল ত্রাসকোভস্কি (৫৩) ও জাতীয়তাবাদী ইতিহাসবিদ কারোল নাভরকির (৪২) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জনমত জরিপগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। নাভরকির সমর্থন ৫০.১ শতাংশ ও ত্রাসকোভস্কির ৪৯.৯ শতাংশ-যা জরিপের ত্রুটির সীমার ভেতরেই পড়ে।
ইইউ ও ন্যাটোভুক্ত দেশ পোল্যান্ডের এই ভোটগ্রহণ বাংলাদেশ সময় রোববার সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১টা পর্যন্ত চলবে। ইউক্রেনের প্রতিবেশী হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন সময়ে কিয়েভের অন্যতম সমর্থক হয়ে উঠেছে পোল্যান্ড।
ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই প্রাথমিক ফলাফল (এক্সিট পোল) প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চূড়ান্ত ফল জানা যাবে সোমবার।
প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকার যে প্রগতিশীল এজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে ত্রাসকোভস্কির জয় বড় সমর্থন হিসেবে কাজ করবে।
এ বিজয় হলে সমলিঙ্গ সিভিল পার্টনারশিপ চালু করা ও কঠোর গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার মতো বড় সামাজিক পরিবর্তন আসতে পারে।
৩ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ পোল্যান্ডে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার আওতায় আইন বাতিলের ভেটো এবং সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অন্যদিকে, নাভরকির বিজয় হলে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা জনরোষ-নির্ভর দল ল অ্যান্ড জাস্টিস (পিআইএস) আবারও রাজনীতিতে উৎসাহ পেতে পারে। এমনকি নতুন সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
নাভরকির অনেক সমর্থক আরও কড়া অভিবাসন নীতির পক্ষে এবং ইইউ-র মধ্যে দেশটির আরও বেশি সার্বভৌমত্ব চায়।
বিয়ালা পডলাস্কার গৃহিণী ৪০ বছর বয়সী অ্যাগনিয়েস্কা প্রোকোপিউক বলছেন, 'আমরা ইউরোপীয় চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে পারি না। পশ্চিমা ধ্যানধারণার কাছে মাথা নত না করে আমাদের নিজেদের পথ তৈরি করতে হবে।'
৪৮ বছর বয়সী যন্ত্র মেরামতকারী তমাশ চুবলুন বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'
ইউক্রেন প্রসঙ্গ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্না মাতেরস্কা-সোসনোভস্কা এই নির্বাচনকে অভিহিত করেছেন 'সভ্যতা সংঘর্ষের বাস্তব প্রকাশ' হিসেবে, কারণ দুই প্রার্থীর নীতিগত ব্যবধান অনেক বিস্তৃত।
ত্রাসকোভস্কির অনেক সমর্থক ইইউতে আরও একীভূতকরণ এবং সমাজে সংস্কার ত্বরান্বিত করার পক্ষে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব ট্যুর গাইড ও শিক্ষক মালগোর্শাতা ভোয়েচেখভস্কা বলেন, 'পোল্যান্ডের নারীরা এখনও আমাদের ইউরোপীয় বন্ধুদের মতো অধিকার ভোগ করেন না। আমি আশা করি রাফাল ত্রাসকোভস্কি গর্ভপাত বিষয়ে নতুন আলোচনা শুরু করবেন, যাতে আমরা অবশেষে এমন একটি দেশে বাস করতে পারি, যেখানে নিজস্ব মত প্রকাশ করার স্বাধীনতা থাকবে।'
এই নির্বাচন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইউক্রেনও, কারণ তারা রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমর্থন চায়।
নাভরকি, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসক, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদে আপত্তি জানিয়েছেন এবং পোল্যান্ডে থাকা প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীর জন্য সুযোগ-সুবিধা কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
শুক্রবার প্রচারণার শেষ সময়ে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের হাতে নিহত পোলিশ নাগরিকদের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, 'পোলিশ জনগণের বিরুদ্ধে এটি একটি গণহত্যা ছিল।'
এই নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করছে ত্রাসকোভস্কি তার সমর্থকদের কতটা ভোটকেন্দ্রে আনতে পারবেন এবং প্রথম দফায় যারা চরম ডানপন্থী প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন (যাদের সম্মিলিত ভোট ২১ শতাংশের বেশি), তারা শেষ পর্যন্ত নাভরকিকে ভোট দেবেন কি না, তার ওপর।
প্রথম রাউন্ডে ত্রাসকোভস্কি পেয়েছেন ৩১ শতাংশ, আর নাভরকি পেয়েছেন ৩০ শতাংশ ভোট।