বাসস
  ০১ জুন ২০২৫, ১২:০৬
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৪:১৩

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের জবাব ‘অগ্রহণযোগ্য’ : স্টিভ উইটকফ

ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত প্রস্তাবে হামাস তাদের জবাব দিয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে, তবে ওয়াশিংটনের প্রধান আলোচক স্টিভ উইটকফ ওই জবাবকে ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, তারা একটি ‘ইতিবাচক জবাব’ দিয়েছে, তবে এর পাশাপাশি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়েছে-যা বরাবরই ইসরাইলের জন্য একটি জটিল ইস্যু ছিল।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফের মূল্যায়নের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, হামাস এখনও ‘অগ্রহণযোগ্য’ অবস্থানে এবং তাদের ‘অস্বীকৃতির নীতিতেই’ অনড় রয়েছে।

শুক্রবার ইসরাইল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, হামাসকে হয় প্রস্তাব মেনে নিয়ে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে, নয়তো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ হয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

শনিবার এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, তারা মধ্যস্থতাকারী পক্ষগুলোর কাছে তাদের জবাব জমা দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই চুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিরোধের হাতে থাকা দখলদার বাহিনীর ১০ জীবিত বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং ১৮টি মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে—যার বিনিময়ে নির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।’'

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একটি সূত্র জানায়, 'হামাস উইটকফকে একটি ইতিবাচক জবাব দিয়েছে, তবে এটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের নিশ্চয়তার ওপর জোর দিয়েছে।’

স্টিভ উইটকফ বলেন, হামাসের জবাব ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এটি আমাদের আরও পিছিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি হামাসকে আহ্বান জানান, তারা যেন ‘আমরা যে কাঠামোগত প্রস্তাব দিয়েছি, তা মেনে নেয়।’

এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে উইটকফ বলেন, ‘এটাই একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে আমরা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পাদন করতে পারি, যাতে জীবিত ও মৃত জিম্মিদের অর্ধেককে পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে এবং আমরা আন্তরিকভাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কার্যকর আলোচনা শুরু করতে পারব।’

হামাসের অভিযোগ : ‘আলোচনায় পক্ষপাত’

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম এএফপিকে জানান, ‘আমরা উইটকফের প্রস্তাবে ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল জবাব দিয়েছি।’

তবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইসরাইলের অনুকূলে আলোচনায় সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন দূতের সঙ্গে আমরা আগে যেসব বিষয়  সম্মত হয়েছিলাম, তার কিছুতে ইসরাই এখন দ্বিমত পোষণ করছে।’

হামাস শুরু থেকেই বলে আসছে, যেকোনো চুক্তিতে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে অবসানের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে।

ইসরাইল বরাবরই এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তারা বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সংগঠনটিকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করা জরুরি।

সম্প্রতি গাজায় হামাসকে পরাস্ত করতে ইসরাইল তার সামরিক অভিযান আরও জোরালো করেছে।

নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইসরাইল আমাদের জিম্মিদের মুক্তির জন্য হালনাগাদ উইটকফ কাঠামো মেনে নিয়েছে, কিন্তু হামাস এখনও অস্বীকৃতির নীতিতে অনড় রয়েছে। তাদের জবাব অগ্রহণযোগ্য এবং পুরো প্রক্রিয়াকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে।’

‘আমরা আমাদের জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাব এবং হামাসকে পরাজিত করব,’ বিবৃতিতে বলা হয়।

গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে কোনো বড় অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। তখন থেকেই ইসরাইল আবারও সামরিক অভিযান শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছিলেন, ‘পক্ষগুলো একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।’

আলোচনার সঙ্গে যুক্ত দুটি সূত্র জানায়, উইটকফের প্রস্তাবে ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি রয়েছে, যা সর্বোচ্চ ৭০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম সপ্তাহে পাঁচজন জীবিত জিম্মি এবং নয়টি মরদেহ মুক্তি দেওয়া হবে, যার বিনিময়ে নির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে হবে আরেক দফা বন্দি বিনিময়।

গাজা ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এদের মধ্যে ৫৭ জন এখনও গাজায় অবস্থান করছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মতে, এদের মধ্যে ৩৪ জন ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন।


জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘৬০৩ দিন ধরে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আমরা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—যুদ্ধ একটি উপায়, নিজে কোনো উদ্দেশ্য নয়,’

তারা বলেছে, ‘'ইসরাইলি সমাজ একক সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধ: বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনাই প্রধান অগ্রাধিকার-যদি তা যুদ্ধের সমাপ্তির বিনিময়ে হয়, তবুও।’

গাজায় মানবিক বিপর্যয় ঘিরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বেড়েই চলেছে। গত মে মাসে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার পুরো জনগোষ্ঠীই দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার এক মুখপাত্র গাজাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

দুই মাসেরও বেশি সময়ের সম্পূর্ণ অবরোধ কিছুটা শিথিল করার পর এখন গাজায় সীমিত আকারে ত্রাণ প্রবেশ করছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এর মধ্যেও তাদের ট্রাক ও গুদামে লুটপাট হয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছে, ‘আরও বেশি খাদ্য সহায়তা দ্রুত গাজায় প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।’ তারা বলছে, ‘চরম হতাশা নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলছে।’

হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ ইসরাইল ফের হামলা শুরু করার পর থেকে অন্তত ৪,১১৭ জন নিহত হয়েছেন। পুরো যুদ্ধকালীন সময়ের মধ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪,৩৮১ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক।