বাসস
  ০১ জুন ২০২৫, ০৯:৩৮

উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে ইরান : আইএইএ

ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা এক গোপন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম জোরদার করেছে। এদিকে তেহরান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দীর্ঘদিন ধরে চলা পারমাণবিক বিরোধ মেটাতে প্রস্তাব পেয়েছে তারা।

ভিয়েনা থেকে এএফপি জানায়, তবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। দেশটির মতে, পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত প্রতিবেদনটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং এতে ‘ইসরাইলের ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য’ ব্যবহার করা হয়েছে—যা আইএইএর পেশাদার যাচাই প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।

সংস্থাটির ওই গোপন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে—যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশ মানের কাছাকাছি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি শনিবার বলেন, ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাঁচ দফা আলোচনার পর একটি পারমাণবিক সমঝোতা নিয়ে প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি।

‘আজ ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাইদি তেহরান সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের কিছু উপাদান উপস্থাপন করেছেন, যেটির উত্তর আমরা জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের অধিকার বিবেচনায় উপযুক্তভাবেই দেব,’—বলেন আরাগচি।

আইএইএর হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৭ মে পর্যন্ত ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৮.৬ কেজিতে, যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় ১৩৩.৮ কেজি বেশি।

২০১৫ সালের বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে করা চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে বর্তমানে ইরানের মোট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ ৪৫ গুণ বেশি, যা প্রায় ৯ হাজার ২৪৭.৬ কেজি।

আইএইএ জানায়, ‘পরমাণু অস্ত্রধর নয় এমন দেশ ইরান কর্তৃক এইমাত্রার পারমাণবিক পদার্থ উৎপাদন ও সঞ্চয় গভীর উদ্বেগের বিষয়।’

এক পৃথক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে সংস্থাটি তেহরানের সহযোগিতার মাত্রাকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে উল্লেখ করেছে। বিশেষ করে গোপন স্থানে পাওয়া পারমাণবিক পদার্থ নিয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইরান—এমনটিও জানিয়েছে আইএইএ।

পারমাণবিক অস্ত্রকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলছে ইরান

ইরানের চিরবৈরী ইসরাইলের সন্দেহজনক অথচ অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডারের মোকাবেলায় দেশটি নিজেও এমন সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করছে—এমন ধারণা দীর্ঘদিন ধরে পোষণ করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো।

তবে তেহরান বরাবরই পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োজনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং বলছে, এটি সম্পূর্ণ বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।

এ প্রেক্ষাপটে শনিবার ইসরাইলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরান ‘পুরোপুরি পরমাণু অস্ত্র অর্জনের লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ।’

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এইমাত্রার সমৃদ্ধকরণ কেবল তাদের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যারা সক্রিয়ভাবে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে এবং এর কোনো বেসামরিক ভিত্তি নেই।’

উত্তরে আরাগচি দেশটির পুরনো অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্রকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মনে করে।

টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যদি বিষয়টি পরমাণু অস্ত্র হয়ে থাকে, তাহলে আমরাও একমত যে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট।’

এই বক্তব্য দেন একদিন পরই যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান কখনোই পরমাণু অস্ত্র পেতে পারবে না।’ তবে তিনি দ্রুতই একটি চুক্তির আশাবাদও ব্যক্ত করেন।

বৃহস্পতিবার আরাকচি গণমাধ্যমে আলোচিত চুক্তি ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি নিশ্চিত নন যে একটি চুক্তি ‘সন্নিকট’ কিনা।

২০১৮ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি বাতিল করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন চুক্তির লক্ষ্যে ইরান পাঁচ দফা আলোচনা করেছে।

তবে পরবর্তী রাউন্ডের সময় বা স্থান এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে বুধবার আরাগচি বলেন, ‘আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই’ মধ্যস্থতাকারী ওমান এ বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। তবে ইরান বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র না বানিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের রয়েছে—বিশ্ব পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি অনুযায়ী।

‘খুব ভালো আলোচনা’ চলছে: ট্রাম্প

ইরান বারবার ইসরাইলের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে আসছে, বিশেষ করে গত বছর দু’দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায়।

ট্রাম্প বুধবার বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো আলোচনা চলছে।’ একইসঙ্গে তিনি ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেন, ‘এ মুহূর্তে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ঠিক হবে না।’

যদিও সামরিক হামলার সম্ভাবনা তিনি পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি, তবে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রথমে একটি চুক্তির সুযোগ চান তিনি। ট্রাম্প আরও বলেন, ইরানে হামলা হলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের নয়—ইসরাইলের নেতৃত্বেই হবে।

২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ইরান সর্বোচ্চ ৩.৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করছে।

তেহরান সম্প্রতি জানিয়েছে, একটি চুক্তি হলে তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আইএইএর দলে যুক্তরাষ্ট্রের পরিদর্শকদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।