বাসস
  ৩১ মে ২০২৫, ২০:১৬

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিরাট সমাবেশ

ঢাকা ৩১ মে, ২০২৫ (বাসস) : সাবেক প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত সামরিক আইন ঘোষণার পর উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকটে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী মঙ্গলবার। তার মাত্র কয়েকদিন আগে শনিবার রাজধানী সিউলে দুই প্রধান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

সিউল থেকে এএফপি জানায়, গত ডিসেম্বরের সংক্ষিপ্ত সামরিক আইন জারির ঘটনায় ইয়ুন সোক ইওলকে অভিশংসিত করে পদচ্যুত করা হয়। সেই ঘটনার জেরে দীর্ঘ রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উদীয়মান রয়েছেন উদারপন্থী লি জে-মিয়ং। গ্যালাপের সাম্প্রতিক এক জরিপে ৪৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তাকে সেরা প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। অপরদিকে রক্ষণশীল পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) কিম মুন-সু ৩৫ শতাংশ জনসমর্থন পেয়ে তার পেছনে রয়েছেন।

উভয় প্রার্থীর পক্ষ থেকেই পুলিশের কাছে জানানো হয়েছে, শনিবার সিউলে তাদের সমর্থকদের হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হবে।

রাজধানীর দক্ষিণাঞ্চলীয় সেওচো এলাকায় লি’র সমর্থকেরা ইয়ুনের ‘বিদ্রোহের’ নিন্দা জানিয়ে স্লোগান দেন। এক সমর্থক লি কিয়ং-জুন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গেছে। আমি আজকের সমাবেশে এসেছি সামরিক আইন প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের নিন্দা জানাতে।’

বর্তমানে বিদ্রোহের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি রয়েছেন ইয়ুন সোক ইয়েওল। এদিনের সমাবেশের আয়োজক কন ও হিয়ক বলেন, ‘৩ জুনের ভোটে লি’র বিজয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ইয়ুনের বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘যে দলে (পিপিপি) ইয়ুনের অনুগতরা রয়েছে, সেই দল যদি এই হঠাৎ নির্বাচনে অংশ নেয়, তবে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও অপমানের শামিল।’

অন্যদিকে রাজধানীর কেন্দ্রস্থল গোয়াংহোয়ামুন স্কয়ারে রক্ষণশীলরা সমবেত হয়। অনেকেই সেখানে ইয়ুনপন্থী স্লোগান দেন, ‘ইয়ুনকে আবার আনো’ ও ‘আগাম ভোট অবৈধ’।

ইয়ুন তার সামরিক আইন ঘোষণার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘উত্তর কোরিয়াপন্থী ও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে দমন করতে এটি জরুরি ছিল।’ তার এই ঘোষণায় চরম ডানপন্থী ইউটিউবার ও ধর্মীয় নেতারা সক্রিয় হয়ে ওঠেন, যারা নানা ভিত্তিহীন দাবি ছড়িয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে চীনা গোয়েন্দা কার্যক্রম ও নির্বাচন ব্যবস্থায় জালিয়াতির অভিযোগ।

শনিবারের রক্ষণশীল সমাবেশে এসব বক্তব্যই উঠে আসে। তারা নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার দাবি জানায়, বিশেষ করে সাম্প্রতিক দুই দিনের আগাম ভোটে নানা ‘গড়বড়’-এর অভিযোগ তোলে।

এক বিক্ষোভকারী রি কাং-সান বলেন, ‘সব সমস্যার মূল হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

প্রার্থী লি (ডেমোক্রেটিক পার্টি) ও কিম (পিপিপি) উভয়েই এই নির্বাচনকে জাতির আত্মার জন্য লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের আগাম ভোটে এক-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রবাসী ভোটারদের মধ্যেও প্রায় ১.৯৭ মিলিয়নের মধ্যে চার-পঞ্চমাংশ ভোট দিয়েছেন, যা রেকর্ড।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যেই বিজয়ী হোন না কেন, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও বাড়বে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক পার্ক সাং-বিয়ং বলেন, ‘লি জিতলেও পিপিপি তাদের মৌলবাদী ঘাঁটি থেকে বিচ্যুত না হলে ভুয়া তথ্য বা ভিত্তিহীন জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তার সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করবে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে কেবল রাজনৈতিক বিভাজনই নয়, অর্থনৈতিক মন্দা, বিশ্বের সর্বনিম্ন জন্মহার, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি এবং যুদ্ধংদেহী প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।

সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র (নিরাপত্তার প্রধান গ্যারান্টর) ও চীন (বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার)-এর মধ্যকার বৈশ্বিক সংঘাতের জটিল সমীকরণও সামলাতে হবে।