বাসস
  ৩১ মে ২০২৫, ১৭:৫৯

গর্ভপাতের বড়ি আবিষ্কারক এতিয়েন-এমিল বাল্যু মারা গেছেন

ঢাকা, ৩১ মে, ২০২৫ (বাসস) : গর্ভপাতের ওষুধ আবিষ্কারক হিসেবে খ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী এতিয়েন-এমিল বাল্যু প্যারিসে নিজ বাসভবনে শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর—তার স্ত্রী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, এই চিকিৎসক ও গবেষক গর্ভপাতের বড়ি আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি অর্জন করেন। তার জীবনে ছিল নানা ঘটনাবহুল অধ্যায়—যার মধ্যে আছে ফরাসি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং অ্যান্ডি ওয়ারহলের মতো শিল্পীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব।

তার স্ত্রী সিমোন হারারি বাল্যু এক বিবৃতিতে জানান, ‘বিজ্ঞান দিয়ে সমাজে অগ্রগতি সাধন, নারীদের স্বাধীনতায় তার দৃঢ়তা এবং সকলের দীর্ঘ ও ভালো জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষাই ছিল তার গবেষণার চালিকাশক্তি।'

বাল্যুর সবচেয়ে আলোচিত আবিষ্কার হলো মুখে সেবনযোগ্য গর্ভপাতের বড়ি আরইউ-৪৮৬ বা মিফিপ্রিস্টোন। এটি বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ নারীর জন্য অস্ত্রোপচার ছাড়াই নিরাপদ ও সাশ্রয়ী গর্ভপাতের সুযোগ এনে দেয়।

তার কাজের কারণে গর্ভপাতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে, এমনকি কখনও কখনও হুমকিও পেয়েছেন।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইওমিং রাজ্য যখন গর্ভপাতের ওষুধ নিষিদ্ধ করে, তখন বাল্যু একে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনের বড় একটি অংশ ব্যয় করেছি নারীদের স্বাধীনতা বাড়ানোর জন্য। এই নিষেধাজ্ঞা সেটার সম্পূর্ণ বিপরীত।’

‘শিল্পীদের প্রতি মোহ’

১৯২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরে এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাল্যু। তার প্রকৃত নাম ছিল এতিয়েন ব্লুম। চিকিৎসক বাবা মারা যাওয়ার পর তার নারীবাদী মা তাকে লালন-পালন করেন।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে নাৎসি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফরাসি প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দিয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন এমিল বাল্যু। পরে নামের সঙ্গে যুক্ত করেন ‘এতিয়েন’।

যুদ্ধের পর তিনি নিজেকে ‘বিজ্ঞানচর্চাকারী চিকিৎসক’ বলে অভিহিত করতেন। তার বিশেষায়িত ক্ষেত্র ছিল স্টেরয়েড হরমোন।

যুক্তরাষ্ট্রে কাজের আমন্ত্রণ পাওয়ার পর ১৯৬১ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির জনক গ্রেগরি পিনকাস তার গবেষণাকর্মে আগ্রহী হয়ে তাকে যৌন হরমোন নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন।

ফ্রান্সে ফিরে বাল্যু প্রোজেস্টেরন হরমোনের কার্যকারিতা বন্ধ করার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এই হরমোন নিষিক্ত ডিম্বাণুর গর্ভাশয়ে সংযুক্ত হওয়ার জন্য অপরিহার্য। তার এই আবিষ্কার থেকেই ১৯৮২ সালে মিফিপ্রিস্টোনের জন্ম।

সাহিত্যপ্রেমী বাল্যু ১৯৬০-এর দশকে অ্যান্ডি ওয়ারহলের মতো শিল্পীদের বন্ধু হয়ে ওঠেন।

তার ভাষায়, ‘আমি শিল্পীদের দ্বারা মুগ্ধ, যারা দাবি করেন তারা মানব আত্মার সংস্পর্শে যেতে পারেন—যা বিজ্ঞানীদের কাছে চিরকাল অধরা।’

আলঝেইমার ও বিষণ্নতা নিয়ে গবেষণা

বাল্যু তার ৯৫ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত প্যারিসের অফিসে যেতেন। ২০২৩ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘কাজ না করলে আমার সময় কাটে না।’

শেষ বয়সেও তিনি আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ এবং গুরুতর বিষণ্নতার চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।

২০২৩ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ তাকে ‘গ্রঁ ক্রুয়া দ্য লেজিওন দ’অনার’ খেতাবে ভূষিত করেন—যা ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মান।

মাখোঁ বলেন, ‘আপনি একজন ইহুদি এবং প্রতিরোধযোদ্ধা। আপনাকে জঘন্যতম গালাগাল সহ্য করতে হয়েছে, এমনকি নাৎসি বিজ্ঞানীদের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু আপনি টিকে ছিলেন—স্বাধীনতা ও বিজ্ঞানের ভালোবাসায়।’

যুক্তরাষ্ট্রেও তিনি ১৯৮৯ সালে সম্মানজনক লাস্কার পুরস্কারে ভূষিত হন।

ইয়োলান্দে কম্পানিয়নের মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে বাল্যু সিমোন হারারির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

পরিবারের দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, তিনি তিন সন্তান, আট নাতি-নাতনি এবং নয়জন প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী রেখে গেছেন।