শিরোনাম
ঢাকা, ৩১ মে, ২০২৫ (বাসস): প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের একচেটিয়া আধিপত্য কমাতে এর জনপ্রিয় ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি বা আলাদা করা সংক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের গত বছর দেয়া ঐতিহাসিক রায়ের বিরুদ্ধে চলমান মামলায় শুক্রবার গুগলের আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন।
বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসির জেলা আদালতের বিচারক আমিত মেহতার অধীনে মামলাটি চলছে এবং ব্রাউজার ক্রোম বিক্রি বা আলাদা করার আদেশের ‘প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
আদালতে গুগলের আইনজীবী বিভাজনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, অনলাইন সার্চের ওপর তাদের প্রভাব কমানোর উদ্যোগ হিসেবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে উদ্ভাবন ও ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ চায়, গুগল যেন ক্রোম ব্রাউজার বিক্রি করে দেয় বা তাদের থেকে আলাদা করে ফেলে। তাদের মতে, গুগল শিগগিরই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার করে ইন্টারনেটে আরো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।
তাদের দাবি, গুগল যেন অ্যাপল ও স্যামসাং-এর মতো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করার মাধ্যমে নিজেদের সার্চ ইঞ্জিনকে ডিফল্ট হিসেবে বসানোর অধিকার না পায়। সিলিকন ভ্যালির ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগলের বিরুদ্ধে মামলার মূল ফোকাস ছিল এই ধরনের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ।
গুগলের আইনজীবী জন শ্মিটলাইন আদালতে বলেন, মামলায় এমন কোনো প্রমাণ উঠে আসেনি যে একচেটিয়া আধিপত্য না থাকলে গুগলের ব্যবহারকারীরা অন্য সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করতেন।
উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, গুগলের সঙ্গে কোনো বাধ্যতামূলক চুক্তি ছাড়াই ভেরাইজন (একটি মার্কিন টেলিকম প্রতিষ্ঠান) তাদের স্মার্টফোনে ক্রোম ব্রাউজার ইনস্টল করে। অথচ প্রতিষ্ঠানটি নিজেই ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন পরিচালনা করে।
শ্মিটলাইন আরো বলেন, মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া প্রায় ১০০ জনের কেউই বলেননি, ‘যদি আরও স্বাধীনতা পেতাম, তাহলে মাইক্রোসফটের বিং ইনস্টল করতাম।’
মার্কিন বিচার বিভাগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবী ডেভিড ডালকুইস্ট। তিনি বলেন, গুগল বহু বিলিয়ন ডলার দিয়ে অ্যাপলকে প্রলুব্ধ করেছিল, যাতে আইফোনে গুগল সার্চ ডিফল্ট থাকে। অ্যাপল একাধিকবার ‘আরও স্বাধীনতা’ চাইলেও, গুগল তা দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অন্যদিকে, গুগলের দাবি, সরকার মামলার মূল বিষয়বস্তু থেকে সরে গিয়ে ক্রোম বিক্রি বা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম বিক্রির সম্ভাবনার মতো অপ্রয়োজনীয় সুপারিশ করছে। এর ফলে উদ্ভাবন বাধাগ্রস্ত হবে, ছোট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ব্যবহারকারীরা খারাপ মানের পণ্য পাবেন বলে সতর্ক করে কাটো ইনস্টিটিউটের প্রযুক্তি নীতিবিষয়ক সিনিয়র ফেলো জেনিফার হাডলস্টন।
গুগলের আইনজীবী শ্মিটলাইন বলেন, ক্রোম ব্যবহারকারীদের ৮০ শতাংশেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের। ফলে, বিভাজনের নির্দেশ দিলে এর বৈশ্বিক প্রভাব পড়বে এবং ব্রাউজারের গুণগত মান অনেকটাই কমে যাবে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন করা ক্রোম হবে আজকের শক্তিশালী ক্রোমের ছায়ামাত্র হবে। আর একবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে কেউই লাভবান হবে না।’
এই মামলা শুরু হয়েছিল পাঁচ বছর আগে, তখনও চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটির মতো এআই প্রযুক্তি জনপ্রিয় হয়নি। এখন তারা গুগলের সার্চ আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে।
আদালতে অ্যাপলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এডি কিউ সাক্ষ্য দিয়েছেন, এপ্রিল মাসে অ্যাপল ডিভাইসে গুগলের সার্চ ট্রাফিক ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কমেছে। এর পেছনে চ্যাটজিপিটি ও পারপ্লেক্সিটির মতো এআই প্রযুক্তিনির্ভর সার্ভিসগুলোর বিকল্প সেবার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন বিচার বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী গুগলের ডেটা ভাগাভাগি কতটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মতামত জানতে চান বিচারক মেহতা। সেসময় বিচার বিভাগের আইনজীবী অ্যাডাম সেভাট বলেন, ‘আমরা গুগলকে অক্ষম করে দিতে চাই না, বরং চাই অন্যরাও যেন প্রতিযোগিতা করতে পারে।’
তবে গুগলের যুক্তি, যে ডেটা ভাগাভাগি করতে বলা হচ্ছে, তাতে শুধু ক্লিক বা সার্চ নয়, গুগলের দশকের পর দশক ধরে গড়ে ওঠা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ফলাফলও রয়েছে। যেখানে অন্য কাউকে সমান সুবিধা দিলে গুগলের প্রতি অন্যায় করা হবে।
শ্মিটলাইন বলেন, ডেটা ভাগাভাগির প্রস্তাব মানে হল আমরা আমাদের প্রতিভা ও উদ্ভাবনের ফল বিনিময় করি। কিন্তু সেটি এই মামলার তুলনায় অত্যন্ত অতিরিক্ত দাবি।