শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : রাশিয়া বুধবার জানিয়েছে , তারা শান্তি মীমাংসার পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য আগামী সোমবার ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের সাথে নতুন আলোচনা চায়, তবে কিয়েভ জানিয়েছে যে বৈঠকের ফলাফলের জন্য তাদের পরিকল্পনাটি আগে থেকেই দেখা দরকার।
মস্কো থেকে এএফপি জানায়, তিন বছরের সংঘাতের অবসানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক ত্বরান্বিত হয়েছে, তবে মস্কো বারবার নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের সর্বোচ্চ দাবিগুলো হ্রাস করার কোনও লক্ষণ দেখায়নি।
দুই পক্ষ এর আগে ১৬ মে ইস্তাম্বুলে আলোচনায় মিলিত হয়েছিল, সেটি ছিল তিন বছরেরও বেশি সময় পরে তাদের প্রথম সরাসরি আলোচনা। তবে সেই বৈঠক কোনো অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি শান্তি চুক্তির জন্য জোর দিয়ে আসছেন, মস্কোর স্পষ্টতই স্থবিরতায় ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং বুধবার সতর্ক করে দিয়েছেন যে তিনি ‘প্রায় দুই সপ্তাহের’ মধ্যে নির্ধারণ করবেন যে ভøাাদিমির পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারে আন্তরিক কিনা।
শান্তি চুক্তির জন্য চাপ দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মস্কোর স্পষ্টতই স্থবিরতায় ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং বুধবার সতর্ক করে দিয়েছেন যে তিনি ‘প্রায় দুই সপ্তাহের’ মধ্যে ভøাদিমির পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে আন্তরিক কিনা তিনি সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবেন।
ইউক্রেন জানিয়েছে যে তারা ইতোমধ্যেই রাশিয়ার কাছে তাদের শান্তির শর্তাবলী জমা দিয়েছে এবং মস্কোকেও তাদের শর্ত জানানোর দাবি জানিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ, যিনি শেষ আলোচনায় কিয়েভের হয়ে আলোচনা করেছিলেন, তিনি এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছেন, ‘আমরা রাশিয়ানদের সাথে আরও বৈঠকের বিরোধিতা করছি না এবং তাদের স্মারকলিপির জন্য অপেক্ষা করছি।’
‘রাশিয়ার পক্ষের তাদের পর্যালোচনার জন্য তাদের নথি সরবরাহ করার জন্য তাদের যাত্রার আগে কমপক্ষে চার দিন সময় আছে। কূটনীতি অবশ্যই বাস্তবসম্মত হতে হবে এবং পরবর্তী বৈঠকে অবশ্যই ফলাফল পাওয়া যাবে।’
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর আক্রমণের ফলে শুরু হওয়া হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এবং পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের বিশাল অংশ ধ্বংস হয়েছে।
রাশিয়ান সেনাবাহিনী এখন ক্রিমিয়ান উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে, তারা ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ সংযুক্ত করেছিল।
রাশিয়া বলেছে, তারা আগামী সোমবার আলোচনায় তাদের শান্তির শর্তাবলীর রূপরেখাসহ একটি ‘স্মারকলিপি’ উপস্থাপন করবে এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে প্রস্তাবটি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
ল্যাভরভ একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভøাদিমির মেডিনস্কির নেতৃত্বে আমাদের প্রতিনিধিদল ২ জুন, সোমবার ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফা সরাসরি আলোচনার সময় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা প্রদান করতে প্রস্তুত।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী মেডিনস্কি ১৬ মে ইস্তাম্বুলে প্রথম দফা আলোচনার সময় রাশিয়ার আলোচক দলের নেতৃত্ব দেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক বিমান হামলা হয়েছে, ইউক্রেন রাতের বেলায় রাশিয়ার উপর তার সর্ববৃহৎ ড্রোন হামলা চালিয়েছে এবং সপ্তাহের শেষে মস্কো ইউক্রেনে মারাত্মক হামলা চালিয়েছে।
ট্রাম্প বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনা প্রক্রিয়া চলাকালীন রাশিয়ার মারাত্মক বোমাবর্ষণে তিনি ‘খুব হতাশ’, তবে মস্কোর উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন ,‘যদি, আমি মনে করি, আমি একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কাছাকাছি পৌঁছে গেছি, তাহলে আমি এটি করে নষ্ট করতে চাই না।’
ক্রেমলিন এর আগে ট্রাম্প ও পুতিনের সাথে ত্রি-পক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল।
মস্কো জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জেলেনস্কির সাথে যেকোনো বৈঠক কেবল তখনই হবে যখন উভয় পক্ষের আলোচকদের মধ্যে ‘দৃঢ় চুক্তি’ সম্পন্ন হবে।
শান্তির বিনিময়ে, ক্রেমলিন ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার এবং ইতোমধ্যেই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে, এই প্রস্তাবকে ইউক্রেন অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছে।
এই মাসের শুরুতে ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় প্রত্যেক পক্ষের ১,০০০ বন্দি বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং উভয় পক্ষ নিজ নিজ শান্তি প্রস্তাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
কিন্তু রাশিয়া ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেনের উপর মারাত্মক হামলা চালিয়ে গেছে।
বুধবার জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তারা শান্তি প্রক্রিয়াকে টেনে আনছে এবং তাদের আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে চাচ্ছে না।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসের সাথে বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘তারা ক্রমাগত যুদ্ধ শেষ না করার কারণ খুঁজবে।’
জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে, রাশিয়া উত্তর-পূর্ব সুমি সীমান্ত অঞ্চলের সামনের সারিতে ৫০ হাজারের বেশি সৈন্য সংগ্রহ করছে। যেখানে মস্কোর সেনাবাহিনী ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের ভিতরে একটি ‘বাফার জোন’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে বেশ কয়েকটি বসতি দখল করেছে।