বাসস
  ২৯ মে ২০২৫, ১০:২৩
আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ১২:২২

চীন-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের তৃতীয় বৈঠকে পাঁচ দফা ঐকমত্য

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২৯ মে, ২০২৫ (বাসস): চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ও কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তানেতি মামাউ বুধবার চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ফুজিয়ান প্রদেশের শিয়ামেনে চীন-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের তৃতীয় বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেছেন। বৈঠকে পাঁচ দফা ঐকমত্যে পৌঁছার ঘোষণা দেওয়া হয়।

শিয়ামেন থেকে সিনহুয়া জানায়, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ওয়াং ই বলেন, এ বছর চীন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনার ৫০তম বার্ষিকী। তিনি উল্লেখ করেন, চীন বরাবরই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, অংশীদার ও ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করে এসেছে।

ওয়াং বলেন, দুই পক্ষের শীর্ষ নেতাদের কৌশলগত দিকনির্দেশনার আলোকে এই সম্পর্ক নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে, নতুন সাফল্য অর্জন করেছে এবং এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

চীন-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর যৌথ ভবিষ্যতের ভিত্তিতে একটি সম্প্রদায় গড়ে তুলতে ওয়াং ছয় দফা প্রস্তাব দেন:
১. পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা,
২. উন্নয়ন সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া,
৩. জনগণ-কেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা রক্ষা,
৪. আদান-প্রদান ও পারস্পরিক শেখার সংস্কৃতি গড়ে তোলা,
৫. ন্যায় ও ন্যায্যতা সংরক্ষণ, এবং
৬. চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ে সংহতি বজায় রাখা।

ওয়াং বলেন, বর্তমান বিশ্বের গভীর পরিবর্তন, সময় ও ইতিহাসের প্রবাহের মুখোমুখি হয়ে চীন বিশ্বাস করে, শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুবিধাই একমাত্র সঠিক পথ।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে চীনের মূল্যবান সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, চীনের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা, বোঝাপড়া ও সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এটি তাদের স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত, যা তাদের মৌলিক স্বার্থের অনুরূপ এবং আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সহায়ক।

তারা সর্বসম্মতিক্রমে ‘এক চীন নীতি’-তে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তারা অবকাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁরা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের মানসম্পন্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠনে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ওয়াং জানান, সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সাধারণ আগ্রহের বিষয়ে গভীর আলোচনার পর চীন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলো নিম্নলিখিত পাঁচটি দফায় ঐকমত্যে পৌঁছেছে:

১. সমতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক

চীন সবসময়ই দেশগুলোর আকার যাই হোক না কেন, সমতার নীতিতে বিশ্বাস করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর ‘এক চীন নীতি’ পুনর্ব্যক্ত ও চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার বৈধ অধিকারে তাদের সমর্থনের জন্য চীন তাদের প্রশংসা করেছে।

২. সাম্প্রদায়িক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি

উভয়পক্ষ উচ্চমানের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ ও ‘ব্লু প্যাসিফিক কন্টিনেন্ট ২০৫০ কৌশল’-এর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করবে। চীন দ্বীপদেশগুলো থেকে মানসম্পন্ন পণ্য আমদানিতে আরও সুবিধা দেবে, যাতে তারা চীনের বিশাল বাজারের সুফল পেতে পারে।

৩. ন্যায় ও ন্যায্যতা রক্ষা

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০তম বার্ষিকীকে উপলক্ষ করে উভয়পক্ষ বহুপাক্ষিকতাকে সমর্থন করবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুত থাকবে।

৪. উন্মুক্ততা ও অন্তর্ভুক্তির আদর্শ

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশগুলোর উন্নয়ন সহযোগী বেছে নেওয়ার স্বায়ত্তশাসনকে শ্রদ্ধা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জীবনমান উন্নয়নের মতো জরুরি বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

৫. পারস্পরিক শেখা ও সভ্যতা বিনিময়

চীনা সভ্যতা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলের অনন্য সামুদ্রিক সভ্যতা—উভয়ই বিশ্ব ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ। দুই পক্ষ ঐতিহ্যগত বন্ধুত্ব জোরদার করবে, ‘গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ’ যৌথভাবে এগিয়ে নেবে এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি, গণমাধ্যমসহ নানা ক্ষেত্রে আদান-প্রদান গভীর করবে, যাতে মানবসমাজের সভ্যতাগত অগ্রগতি সাধিত হয়।