শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ক্রমবর্ধমন জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং নির্গমন কমাতে পারমাণবিক শক্তির দিকে ঝুঁকছে ইন্দোনেশিয়া। ২০৩২ সালের মধ্যে প্রথম ছোট মডিউলার চুল্লি স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি। তবে বাস্তবায়নে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ।
জাকার্তা থেকে এএফপি জানায়, ১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সুকর্নোর সময় পারমাণবিক গবেষণার সূচনা হলেও এখনও বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক চুল্লি চালু হয়নি। বর্তমানে তিনটি গবেষণা চুল্লি রয়েছে দেশটিতে।
দ্বীপপুঞ্জ রাষ্ট্রটি এখনও পর্যন্ত মূলত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই আসে কয়লা থেকে।
তবে অক্সফোর্ড ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি স্টাডিজ-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক ফিলিপ অ্যান্ড্রুজ-স্পিড বলেন, ‘নির্গমন বাড়ার গতি থামাতে এবং তা হ্রাস করতে পারমাণবিক শক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠবে।’
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো আগামী ১৫ বছরের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশটির লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে নিট শূন্য নিঃসরণ অর্জন করা।
সরকার বলছে, ২০৬০ সালের মধ্যে ৪০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৪০ থেকে ৫৪ গিগাওয়াট আসবে পারমাণবিক উৎস থেকে।
এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে বোর্নিও দ্বীপে একটি ছোট মডুলার চুল্লি (এসএমআর) স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানিমন্ত্রী বাহলিল লাহাদালিয়া। এটি ২০৩০ বা ২০৩২ সালের মধ্যে চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
এসএমআর তুলনামূলকভাবে ছোট ক্ষমতার হলেও এটি সহজে পরিবহনযোগ্য ও একত্র করা যায়।
ভূকম্পন প্রবণতা ও চ্যালেঞ্জ
‘রিং অব ফায়ার’ নামে পরিচিত ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার জন্য সাইট নির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও দেশটির জাতীয় জ্বালানি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দাদান কুসদিয়ানা জানান, এখন পর্যন্ত ২৯টি সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলো মূলত জাভা দ্বীপের বাইরের অঞ্চলে।
ইয়োগ্যাকার্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক প্রকৌশল গবেষক আন্দাং উইদি হার্তো বলেন, উত্তর জাভা, পূর্ব সুমাত্রা, পশ্চিম ও মধ্য কালিমানতান অপেক্ষাকৃত কম ভূকম্পন ও আগ্নেয়গিরি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল।
বিদেশি সহযোগিতা ও বিনিয়োগ
দেশটির নিজস্ব পারমাণবিক প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা সীমিত। ফলে সহযোগিতার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হবে। রাশিয়ার রোসআটম, চীনের সিএনএনসি, কানাডার কানডু এবং যুক্তরাষ্ট্রের থরকন ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
থরকন কোম্পানির ইন্দোনেশীয় শাখা ইতোমধ্যে এক ধরনের ‘মল্টেন-সল্ট রিঅ্যাক্টর’-এর অনুমোদন চেয়েছে, যা জাহাজঘাটে তৈরি করে সমুদ্রতলে স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ফ্রান্সের ইডিএফ-এর সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফরে বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।
সমালোচনা ও সংশয়
তবে সময়সীমা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেক বিশেষজ্ঞের। ফিলিপ অ্যান্ড্রুজ-স্পিড বলেন, ‘আগামী ১০ বছরের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ মাত্রায় চালু করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না।’
পরিবেশবাদীরা নবায়নযোগ্য উৎস যেমন জলবিদ্যুৎ, সৌর ও বায়ুশক্তির ওপর আরও গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। বর্তমানে সৌর ও বায়ুশক্তির অবদান খুবই নগণ্য।
এছাড়া উচ্চ ব্যয়, দূর্নীতি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় বিরোধিতা প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে কুসদিয়ানা দাবি করেন, প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাওয়া যাবে এবং রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ডেনমার্কসহ অনেক দেশ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।