বাসস
  ২৭ মে ২০২৫, ১০:১৫

ভেনিজুয়েলায় নির্বাচনী বয়কটের সুযোগে মাদুরোর দলের নিরঙ্কুশ বিজয়

ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভেনিজুয়েলার বিরোধী শিবিরের বিভাজন আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এবার তারা নির্বাচন বয়কট করায় দেশের স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর দল ‘ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক পার্টি’ (পিএসইউভি) আঞ্চলিক ও পার্লামেন্ট নির্বাচন একচেটিয়াভাবে জিতে নিয়েছে।

কারাকাস থেকে এএফপি জানায়, রোববার অনুষ্ঠিত গভর্নর ও জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচনে বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে মাদুরোর দল ২৪টি রাজ্যের মধ্যে ২৩টিতেই জয়লাভ করেছে এবং ২০৩১ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ সিএনই।

গত বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোটে ভোটার উপস্থিতি আরও কম ছিল। মাদুরো সে নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো ‘জয়’ দাবি করেন, যদিও বিরোধী দল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

সিএনই, যাকে মাদুরোর প্রভাবাধীন বলা হয়ে থাকে, জানায়—রোববারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪২ শতাংশের সামান্য কিছু বেশি।

প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদোর নেতৃত্বাধীন জোট ভোট বর্জনের ডাক দেয়, নির্বাচনের আগেই এটিকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে। তবে বিরোধী শিবিরের ছোট একটি অংশ, যার নেতৃত্বে আছেন দুইবারের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হেনরিকে কাপ্রিলেস, নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে ছিলেন। তার যুক্তি, বয়কট কেবল মাদুরোকেই আরও শক্তিশালী করেছে।

সোমবার কাপ্রিলেস, যিনি নিজেও একটি আসনে জয় পেয়েছেন, বলেন, 'এটি ছিল অনুমিত ফলাফল। অনুপস্থিতিই জয়ী হয়েছে, আর সেই সঙ্গে শাসকগোষ্ঠী ও বয়কটদাতারাও।'

তিনি ‘একচেটিয়া বিজয়ের’ জন্য শাসক দলের আদর্শ ‘শাভিজম’-কে দায়ী করেন এবং বলেন, যারা ভোট দিয়েছেন, তারা ‘প্রবাহের বিপরীতে গিয়ে’ নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন।

মাদুরোর ছেলে নিকোলাস মাদুরো গুয়েরা (৩৫) ও ফার্স্ট লেডি সিলিয়া ফ্লোরেস তাদের আসন ধরে রেখেছেন। পার্লামেন্টের স্পিকার ও মাদুরোর ঘনিষ্ঠ জর্জে রদ্রিগেজ জানান, ২৮৫ আসনের মধ্যে পিএসইউভি ও তাদের মিত্ররা ২৫৬টি আসন জিতেছে। তবে সিএনই চূড়ান্ত ফলাফল এখনো প্রকাশ করেনি।

দমন-পীড়ন ও গণগ্রেপ্তার

নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়। ভোট ‘বানচাল' করার চেষ্টার অভিযোগে গত সপ্তাহে ৭০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হন। তাদের মধ্যে অন্যতম বিরোধী নেতা হুয়ান পাবলো গুয়ানিপা, যিনি ‘সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার অভিযোগে আটক হন।

ভোটের দিন দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় চার লাখের বেশি সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী। প্রতিবেশী কলম্বিয়ার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ করে সীমান্তেও কড়াকড়ি আরোপ করে কারাকাস।

মাদুরো ভোটের পর বলেন, 'এই জয় হলো শান্তির জয়, স্থিতিশীলতার জয়। শান্তি, শান্তি, শান্তি!'

তবে অনেক বিরোধী সমর্থক ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ন্যায়সঙ্গত বলে ব্যাখ্যা করেন, কারণ গত জুলাইয়ের নির্বাচনে সিএনই কোনো বিস্তারিত ফল প্রকাশ না করেই মাদুরোকে জয়ী ঘোষণা করেছিল।

বিরোধীরা পৃথক গণনা করে দাবি করে, তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস উরুতিয়া স্পষ্ট ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়কার বিক্ষোভে ২৮ জন নিহত হন, শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সারা বিশ্ব থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো হয়।

রোববার মাচাডো ফের সশস্ত্র বাহিনীকে মাদুরোর বিপক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এবং বলেন, নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে এই প্রহসনকে জনসমক্ষে উন্মোচিত করা গেছে।

এদিকে নির্বাসিত নেতা গঞ্জালেস উরুতিয়া ‘একটি নীরব কিন্তু গর্জনশীল প্রতিবাদ’-এর কথা বলেন এবং জানান, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আজও অটুট রয়েছে।

বিতর্কিত এসেকুইবো অঞ্চলেও ভোট

এই নির্বাচন এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো, যখন ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি বিধ্বস্ত এবং দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেভরনকে ভেনিজুয়েলায় তেল উত্তোলনের অনুমতি বাতিল করেছেন, যা মাদুরোর সরকারের জন্য শেষ ‘লাইফলাইন’ ছিল।

এবারের নির্বাচন প্রথমবারের মতো এসেকুইবো নামক বিতর্কিত অঞ্চলেরও কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে। এই তেলসমৃদ্ধ এলাকা প্রতিবেশী গায়ানার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভেনিজুয়েলা এটি নিজেদের দাবি করে।

জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কারাকাস ওই অঞ্চলে ‘ভোট’ আয়োজন করে। যদিও বাস্তবে এসেকুইবোতে কোনো ভোটকেন্দ্র ছিল না—ভোট হয় ভেনিজুয়েলার বলিভার সীমান্ত রাজ্যে একটি ক্ষুদ্র নির্বাচনী জেলায়।

রোববার এসেকুইবো অঞ্চলের ‘নির্বাচিত’ গভর্নর হিসেবে পিএসইউভি সদস্য অ্যাডমিরাল নিল ভিয়ামিসার-এর নাম ঘোষণা করা হয়।