বাসস
  ২৬ মে ২০২৫, ২২:০২

সাহারার রোষে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে মৌরিতানিয়ার প্রাচীন শহর ওয়ালাতা

ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : মৌরিতানিয়ার সাহারা মরুভূমির সীমান্তঘেঁষা প্রাচীন শহর ওয়ালাতাকে ছাদের ওপর থেকে তাকিয়ে দেখেন সিদি মোহাম্মদ লেমিন সিদিয়া। একে তিনি বলেন ‘চিরন্তনের তীর’ অথচ এই অতুলনীয় শহরটি এখন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মরুর অতল ধূলায়।

মৌরিতানিয়ার ওয়ালাতা থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই শহরটি এক সময় বাণিজ্য ও ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র ছিল। এখনও শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন কালে নির্মিত একরঙা গাঢ় লালচে মাটির তৈরি বাড়িঘর, খোদাই করা কাঠের দরজা এবং স্থানীয় নারীদের হাতে আঁকা ঐতিহ্যবাহী নকশা।

এখানকার পরিবারগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সঞ্চিত করে আসছে শত শত বছরের কোরআনিক ও সাহিত্যিক পাণ্ডুলিপি। তবে সাহারার কঠোর জলবায়ুর কারণে এগুলোর অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

সিদিয়া বলেন, ‘বৃষ্টি বেশি হওয়ায় অনেক ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।’ খাদি নামের এক নারী বলেন, তার দাদাবাড়ির বাড়িটিও ভেঙে পড়েছে। শহর ছেড়ে বাসিন্দারা চলে যাওয়ায় এই ধ্বংসযজ্ঞ আরও গভীর হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে শহর

সিদিয়া জানান, কাজের খোঁজে মানুষজন চলে যাওয়ায় শহরের পুরোনো ঘরবাড়িগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। ‘ওয়ালাতা এখন সর্বত্র বালুতে ঢাকা,’ বলেন তিনি।

দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মৌরিতানিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকাই মরুকরণের শিকার। নব্বইয়ের দশকে শুরু হওয়া মরুভূমির বিস্তার বন্ধ করতে শহরের চারপাশে গাছ লাগানো হয়েছিল, কিন্তু তা যথেষ্ট হয়নি।

জিওগ্রাফির শিক্ষক বেচির বারিক বলেন, আশির দশকে শহরের প্রাচীন মসজিদটি বালুতে এতটাই ঢাকা পড়েছিল যে মানুষজন মসজিদের ছাদেই নামাজ আদায় করত।

এক হাজার বছরের পান্ডুলিপির ধনভাণ্ডার

শহরের ইমাম মোহাম্মদ বেন বাতি জানালেন, তাদের পারিবারিক গ্রন্থাগারে ১৪ শতকের পাণ্ডুলিপি রয়েছে। মোট ২২৩টি পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে সেখানে, যেগুলো ভাষাবিজ্ঞান, কোরআনিক বিজ্ঞান, ইতিহাস ও জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণার জন্য অমূল্য সম্পদ।

তিনি বলেন, ‘এই বইগুলো এক সময় খুব খারাপভাবে সংরক্ষিত ছিল। ট্রাংকে রাখা হতো। বৃষ্টি হলে পানি ঢুকে বই নষ্ট হয়ে যেত।’ ছাদের একাংশ আট বছর আগে বৃষ্টির কারণে ধসে পড়ে।

নব্বইয়ের দশকে স্পেনের সহায়তায় ২,০০০টির বেশি বই ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হয়, কিন্তু এখন সেগুলোর দেখভালের জন্য উপযুক্ত অর্থ ও জনবল নেই।

বেন বাতি বলেন, ‘এই গ্রন্থাগারে একজন প্রশিক্ষিত গবেষকের প্রয়োজন, যিনি এর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবেন।’

পর্যটক নেই, হোটেলও না

ওয়ালাতায় কোনো হোটেল নেই। কাছের শহরটিও দুই ঘণ্টা দূরে কাঁচা পথে। নিরাপত্তা সংকটের কারণে অনেক দেশই এই অঞ্চলে ভ্রমণে নাগরিকদের নিষেধ করেছে।

তবে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ওয়ালাতা ও তিনটি অন্য প্রাচীন শহরের রক্ষণাবেক্ষণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর একটি শহরে উৎসবের আয়োজন করা হয় যাতে সংস্কারে অর্থ জোগাড় ও জনগণকে টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া যায়।

সূর্য পাহাড়ের আড়ালে যাওয়ার পর, গরম কমলে শত শত শিশু রাস্তায় বেরিয়ে আসে, আর প্রাণ ফিরে পায় ওয়ালাতা।