বাসস
  ২৪ মে ২০২৫, ২০:১৭

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা কোন পথে?

ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস): ইতালির রাজধানী রোমে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনার পঞ্চম দফায় শুরু হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে তীব্র মতপার্থক্য এখনও বড় বাধা। যদিও উভয় পক্ষ এখনও আলোচনায় আগ্রহী এবং মধ্যস্থতামূলক সংলাপ চালু রয়েছে, যা আশাবাদের ইঙ্গিত দেয়।

মূল দ্বন্দ্ব: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ

১২ এপ্রিল ওমানে প্রথম দফা আলোচনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান চার দফা পরোক্ষ সংলাপ চালিয়েছে, যার মধ্যে তৃতীয় দফায় অর্থনীতিবিদরাও যুক্ত হন। কিন্তু ১৮ মে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ঘোষণা দেন, ‘ইরানকে ১ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণেরও অনুমতি দেওয়া যাবে না।’ ২০১৫ সালের চুক্তিতে অনুমোদিত ৩.৬৭ শতাংশ সীমার বিপরীতে এ অবস্থান ইরানের দৃষ্টিতে ‘লাল রেখা’ লঙ্ঘনের শামিল।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ‘ইরান কারও অনুমতির মুখাপেক্ষী নয়।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন না যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান সংলাপ থেকে কোনো ফল আসবে।

এছাড়া একই দিনে সিএনএন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে জানায়, ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা যদি ইরানের সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়াম অপসারণে ব্যর্থ হয়, তবে হামলার ঝুঁকি বাড়বে।

সমঝোতার অনুপস্থিতি

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফুয়াদ ইযাদি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আসলে লিবিয়া মডেল চাপিয়ে দিতে চাইছে, যা ইরান মেনে নেবে না।’ ইরানি বিশ্লেষক হাসান বেহেশতিপুর বলেন, ‘ইরান ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য আরও অনেক প্রযুক্তি প্রয়োজন, যা ইরানের নেই।’

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আগের আচরণ তুলে ধরে বলেন, একাধিকবার পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহচুক্তি ভঙ্গ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। তাই ইরান নিজের সক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।

কোয়িন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পার্সি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ দাবি খুব কঠোর এবং তা আলোচনার পথই বন্ধ করে দিতে পারে। তিনি মনে করেন, এটি হতে পারে একটি কৌশলগত কড়া অবস্থান—কিন্তু প্রকাশ্যে বলা হওয়ায় পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে।

আলোচনার আওতা ও আস্থার সংকট

চীনের শানডং নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা কেন্দ্রের উপপরিচালক ঝাও বেইপিং বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আলোচনায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাবকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছে, যা আলোচনার জটিলতা বাড়িয়েছে।

চীনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক কিন থিয়ান বলেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ‘কে আগে পিছু হটবে’ সে অবস্থানে আটকে আছে, যার ফলে কোনো কৌশলগত আস্থা দেখা যাচ্ছে না।

আশার আলো এখনও জ্বলছে

তারপরও বিশ্লেষকরা মনে করেন, আলোচনার দরজা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। হাসান বেহেশতিপুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কঠোর অবস্থান হতে পারে কেবল এক ধরনের দর কষাকষির পদ্ধতি। উভয় পক্ষই উত্তেজনা এড়িয়ে একটি চুক্তির দিকে যেতে চায়।

সাংহাই আন্তর্জাতিক স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ঝাও জুন মনে করেন, আলোচনায় তৃতীয় কোনো পক্ষের মধ্যস্থতা একটি সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুলে দিতে পারে, যদি উভয় পক্ষ সেই মধ্যস্থতাকারীকে গ্রহণ করে।

উপসংহার

বর্তমানে সংকট যতটা গভীরই হোক, আলোচনার চালু থাকা ও সমঝোতার চেষ্টা- এই দুটিই ভবিষ্যতের সম্ভাবনার প্রধান ভিত্তি। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তবধর্মী কূটনীতির ওপর একটি চুক্তির সম্ভাবনা নির্ভর করছে। এ মুহূর্তে প্রত্যাশা কম হলেও, পর্দার আড়ালে চলমান আলোচনার গতি পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে।