শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস): সিরিয়ার ওপর দীর্ঘদিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে ‘স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ঘোষণার পর এ পদক্ষেপ কার্যকর হয়।
দামেস্ক থেকে এএফপি জানায়, এ মাসের শুরুতে উপসাগরীয় সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার নতুন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে করমর্দন করেন এবং ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বকে 'মহত্বের পথে একটি সুযোগ' দিতে চায়।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে চমক সৃষ্টি করে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘকালীন শাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটির ক্ষমতায় আসেন শারার নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, 'সিরীয় আরব প্রজাতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়, যা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জনগণের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে।'
এটি 'দেশে চলমান মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট লাঘবে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ' বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
দীর্ঘ ইতিহাসের নিষেধাজ্ঞা
সিরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ১৯৭৯ সালে, বাশার আল-আসাদের পিতা হাফেজ আল-আসাদের শাসনামলে। ২০১১ সালে গণবিক্ষোভ দমনকে কেন্দ্র করে তা আরও কঠোর হয়, যার পর দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় রাখা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার পুনর্গঠনে অংশগ্রহণকারীদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছিল।
সন্ত্রাসবাদী থেকে রাষ্ট্রনায়ক?
বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে একসময় ওয়াশিংটন সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করত। তার মাথার ওপর ছিল ১ কোটি ডলারের পুরস্কার। তবে বর্তমান প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে এগোচ্ছে।
বিনিয়োগে উৎসাহ
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট জানান, 'সিরিয়ায় নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে' বেশ কিছু অনুমোদন কার্যকর করা হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়ার নতুন সরকারের জন্য প্রযোজ্য হবে এই শর্তে যে তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে না এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
২০২০ সালের সিজার অ্যাক্টের আওতায় যেসব কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেগুলো থেকে ১৮০ দিনের জন্য অব্যাহতি দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এটি মূলত বিদেশি বিনিয়োগে বাধা না দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে।
‘নতুন সম্পর্কের সূচনা’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, 'এই ছাড়পত্র বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সেবা পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে এবং একটি কার্যকর মানবিক সাড়া নিশ্চিত করবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আজকের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার মধ্যকার নতুন সম্পর্ক গঠনে প্রেসিডেন্টের যে দৃষ্টিভঙ্গি, তার প্রথম ধাপ।'
তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রত্যাশা করছেন যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর সিরীয় সরকার দ্রুত নীতিগত অগ্রাধিকারগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ইইউ-ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে
এ মাসের শুরুতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সিরিয়ার ওপর তাদের নিজস্ব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই সিদ্ধান্তের আওতায় সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ‘আনফ্রিজ’ করা হয় এবং দেশটির ব্যাংকিং খাতকে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার পেতে সময় লাগতে পারে। কারণ কিছু নিষেধাজ্ঞা কংগ্রেসের আইন হিসেবে পাস হয়েছিল, যেগুলো প্রত্যাহারে আইনগত প্রক্রিয়া প্রয়োজন। তাছাড়া, সিরীয় কর্তৃপক্ষকেও বিদেশি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।