শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ ( বাসস) : কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলা, সিনেটে তার সংসদীয় দায়মুক্তি প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেওয়ার পর, দেশটির বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন, যার ফলে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করার পথ সুগম হয়েছে।
তার দায়মুক্তি প্রত্যাহারের উপর ভোটের পর, কাবিলা যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
বিচার মন্ত্রণালয় সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এক মামলা সামরিক আদালতে প্রেরণ করে। আদালত সিনেটকে আজীবনের জন্য সম্মানসূচক সিনেটর হিসেবে তার সংসদীয় অনাক্রম্যতা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানায়।
সংসদীয় দায়মুক্তি কোনও সদস্যের ব্যক্তিগত অধিকার নয়, এটি একটি গ্যারান্টি যে একজন এমপি স্বেচ্ছাচারী রাজনৈতিক নিপীড়নের মুখোমুখি না হয়ে স্বাধীনভাবে তার ম্যান্ডেট প্রয়োগ করতে পারবেন। ফলে, এটি সামগ্রিকভাবে সংসদের স্বাধীনতা এবং অখণ্ডতার নিশ্চয়তা দেয়।
২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কঙ্গোর নেতা ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচারিত এক ভাষণে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তসেকেরির সমালোচনা করেন। ফেলিক্স তসেকেরি কাবিলার বিরুদ্ধে এম২৩ এর সাথে ষড়যন্ত্রের যোগ দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।
সিনেটের সংসদীয় দায়মুক্তি প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেওয়ার একদিন পর, ৫৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তিকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি তার কথিত সমর্থনের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিনশাসার ‘স্বৈর সিদ্ধান্তের’ তীব্র সমালোচনা করেন কাবিলা।
এম ২৩-অধিকৃত নগরী গোমা পরিদর্শন করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়। এ প্রসঙ্গে কাবিলা বলেন, ‘গোমা যেখানে আমি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যাব সেখানে আমার উপস্থিতি সম্পর্কে পথেঘাটে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি সাধারণ গুজবের পর, কিনশাসার সরকার হতাশাজনকভাবে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আমাদের দেশে গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য পশ্চাদপসরণের সাক্ষ্য দেয়।’
কাবিলা আরও বলেন, ‘একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে এবং গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ও সামাজিক শাসন পুনরুদ্ধার করতে হবে।’
যদিও তিনি ২০২৩ সালে দেশ ত্যাগ করেছিলেন, তার দলের সদস্যরা তার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন, তবুও সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনও কঙ্গোর
রাজনৈতিক জীবনে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে আছেন।
তসেকেরি এম২৩ এর সাথে ‘বিদ্রোহ’ করার ষড়যন্ত্রের জন্য কাবিলাকে অভিযুক্ত করেছেন। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি রুয়ান্ডার সহায়তায় একটি বিশাল অঞ্চল দখল করেছে।
কাবিলা তার বক্তৃতায় ডিআরসি’র পূর্বে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটাতে একটি ১২-দফা পরিকল্পনা তুলে ধরেন, যা ২০২১ সালে এম২৩-এর পুনরুত্থানের পর থেকে তীব্রতর হয়েছে।
২০২৫ সালের শুরু থেকে সরকারবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীটি পূর্বের গুরুত্বপূর্ণ নগরী গোমা ও বুকাভু দখল করেছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
কাবিলা এপ্রিল মাসে সংঘাত-বিধ্বস্ত দেশের পূর্বাঞ্চলে তার প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দিয়ে ডিআরসি জুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলেন। তবে তার প্রত্যাবর্তনের কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ কখনও পাওয়া যায়নি।
তবুও এই ঘোষণার পর, কঙ্গো কর্তৃপক্ষ তার বেশ কয়েকটি সম্পত্তিতে অভিযান চালায় এবং তার পিপলস পার্টি ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (পিপিআরডি) স্থগিত করে।
বিচার মন্ত্রণালয় সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলাটি সামরিক আদালতে প্রেরণ করে এবং সিনেটকে আজীবনের জন্য সম্মানসূচক সিনেটর হিসেবে তার সংসদীয় দায়মুক্তি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানায়।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এক গোপন ভোটে, তসেকেরির আধিপত্য বিশিষ্ট ক্ষমতাসীন জোটের উচ্চকক্ষ তাকে বাদ দেওয়ার পক্ষে বিপুল ভোটে ভোট দেয়।