বাসস
  ২৪ মে ২০২৫, ১৪:৩৩

যুক্তরাষ্ট্র ও বোয়িংয়ের মধ্যে ৭৩৭ ম্যাক্স দুর্ঘটনা মামলায় আপোসের খসড়া চুক্তি

ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ শুক্রবার জানিয়েছে, মারাত্মক ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে চলমান অপরাধ তদন্ত নিষ্পত্তির জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে। তবে এই চুক্তির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, চুক্তির আওতায় বোয়িং ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা) পরিশোধ করবে এবং বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ প্রত্যাহার করবে। এই অভিযোগটি ছিল বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত। তবে এই আপস চুক্তি কার্যকর হতে হলে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন।

এই চুক্তির ফলে জুনে টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থে নির্ধারিত ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়াও বাতিল হয়ে যাবে। চুক্তির আওতায় বোয়িংকে জালিয়াতির দায়ে দোষী স্বীকার করতে হবে না, যদিও ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় ৩৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছিল।

দুর্ঘটনায় নিহতদের কিছু পরিবার চুক্তিকে ‘বোয়িংয়ের প্রতি একতরফা অনুকম্পা’ বলে বর্ণনা করেছেন। নিহতদের একজনের ভাই, হাভিয়ের দে লুইস বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হলো—তোমাদের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।’

আরেক ভুক্তভোগীর আইনজীবী পল ক্যাসেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী করপোরেট অপরাধে এমন সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন এবং অনৈতিক। আমরা আদালতের কাছে চুক্তি প্রত্যাখ্যানের আবেদন জানাবো।’

তবে বিচার বিভাগ বলছে, অনেক পরিবারই মামলার সমাপ্তি চায়। এক আদালত নথিতে বলা হয়, ১১০ জনের বেশি নিহত ব্যক্তির স্বজনরা চুক্তিকে সমর্থন করেছেন, অন্তত বিরোধিতা করেননি।

বিচার বিভাগ তাদের আবেদনে উল্লেখ করে, ‘এই চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে বোয়িংয়ের কাছ থেকে জবাবদিহিতা এবং উল্লেখযোগ্য সুবিধা নিশ্চিত করবে এবং দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা এড়াবে।’

বোয়িং এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

'আসল অপরাধের তুলনায় অতি হালকা শাস্তি’

এই আপস প্রস্তাব ২০১৮ ও ২০১৯ সালের দুইটি মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে শুরু হওয়া দীর্ঘমেয়াদি মামলার সর্বশেষ অধ্যায়। এসব দুর্ঘটনা বোয়িংয়ের ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছে এবং নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছে।

২০২১ সালে বোয়িংকে তিন বছরের প্রবেশন মেয়াদে রেখেছিল বিচার বিভাগ। কিন্তু ২০২৪ সালে বোয়িং একাধিক নিরাপত্তাজনিত ব্যর্থতার কারণে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে বলে জানায় ডিওজে। এরপর বোয়িং স্বীকার করে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতারণার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল।

তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেল বিচারক রিড ও’কনর সেই আপস খারিজ করে দেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের দায়িত্বে থাকাকালীন নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

শুক্রবারের প্রস্তাবিত চুক্তিতে বোয়িং স্বীকার করবে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তবে এর সঙ্গে কোনো ফৌজদারি শাস্তি জড়িত থাকবে না।

রিচমন্ড ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের অধ্যাপক কার্ল টোবায়াস বলেন, 'এটা কার্যত একটি 'স্ল্যাপ অন দ্য রিস্ট', মানে হালকা শাস্তি—প্রকৃত অপরাধের তুলনায় নগণ্য।’

২০২৪ সালে বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসীয় শুনানিতে নেতৃত্ব দেওয়া ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল বলেন, ‘এটা একেবারে অন্যায্য এবং বিমা যাত্রীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। বোয়িং বারবার দায় অস্বীকার করেছে, মিথ্যা বলেছে—এখন তারা চূড়ান্তভাবে দায়মুক্তি পেতে যাচ্ছে।’