বাসস
  ২৪ মে ২০২৫, ১৪:১৫

ইউক্রেন-রাশিয়া: যুদ্ধকালীন সর্ববৃহৎ বন্দি বিনিময় শুরু

ঢাকা, ২৪ মে ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন ও রাশিয়া শুক্রবার এক বিশাল বন্দি বিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, সফলভাবে সম্পন্ন হলে ২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে এটি হবে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়।

ইউক্রেনের চেরনিহিভ থেকে এএফপি জানায়, দুই দেশ প্রথম পর্যায়ে ৩৯০ জন করে বন্দি পেয়েছে এবং তিনদিনে মোট ১,০০০ জন করে বিনিময়ের কথা রয়েছে—গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে এই চুক্তি হয়।

রাশিয়া জানিয়েছে, এই বিনিময়ের পর তারা শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকে নিজেদের প্রস্তাব পাঠাবে।

এএফপির একজন সংবাদদাতা চেরনিহিভ অঞ্চলের একটি হাসপাতালে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ইউক্রেনীয় সেনাদের আসতে দেখেছেন, যারা দুর্বল চেহারা নিয়ে এসেও হাসিমুখে জনতার প্রতি হাত নাড়ছিলেন। অনেকে তাদের স্বজনদের জড়িয়ে ধরেন, আবার কেউ কেউ নিখোঁজ প্রিয়জনের ছবি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বিনিময় নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক্স-এ লেখেন, '১,০০০-এর বিনিময়ে ১,০০০’র প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। আজ ৩৯০ জন। শনিবার ও রোববার এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।'

রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ২৭০ জন সেনা ও ১২০ জন বেসামরিক নাগরিক পেয়েছে, যাঁদের কেউ কেউ কুরস্ক অঞ্চলের দখলকৃত অংশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

‘২০২২-এ আটকে ছিলাম’

৫৮ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় সেনা ভিক্টর সিভাক বলেন, 'মারিউপোলে বন্দি হয়েছিলাম, ৩৭ মাস ১২ দিন ধরে আটক ছিলাম। এখন ফিরে এসে আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।'

আরেক সেনা কস্তিয়ানতিন স্তেবলেভ বলেন, 'তিন বছর ধরে মনে হয়েছে আমি এখনো ২০২২-এ আছি। ২০২৫ কেমন তা কল্পনাও করতে পারছি না।'

অনেকে জানান, প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়া বা সন্ধান পাওয়ার আশায় তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। বাহমুতে নিখোঁজ হওয়া ছেলের খোঁজে অপেক্ষায় ছিলেন লিউদমিলা পারখোমেনকো।

২৮ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া রুদা বলেন, 'আট মাস ধরে ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই—আজ যদি কেউ তার খবর দিতে পারে, সেটিই হবে সবচেয়ে বড় স্বস্তি।'

শান্তিচেষ্টার ইঙ্গিত

রাশিয়ার ধারণা অনুযায়ী, তাদের হাতে ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ ইউক্রেনীয় বন্দি রয়েছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি বিনিময়ে এমন ব্যক্তিরাও ফিরে আসেন যাঁদের নিখোঁজ বা মৃত বলে মনে করা হয়েছিল।

রাশিয়া বলেছে, বিনিময় শেষে তারা শান্তি প্রস্তাব পাঠাবে, তবে সেই প্রস্তাবে কী রয়েছে তা প্রকাশ করেনি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিনিময়কে স্বাগত জানিয়ে তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, 'এটা কি বড় কিছুর ইঙ্গিত???'

তবে জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পরও ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি আনতে পারেননি।

রাশিয়া এখনও পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য ইউরোপীয় চাপ প্রত্যাখ্যান করছে। বরং শুক্রবারই তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওডেসা শহরে দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছে বলে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।