বাসস
  ২২ মে ২০২৫, ১০:৩১

কিউবার 'ফুস্তারের রাজ্য’: জেলেপাড়া থেকে মোজাইকে মোড়া রূপকথার শিল্পপুরী

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : ১৯৯৪ সালে কিউবান শিল্পী হোসে ফুস্তার নিজের ঘরজুড়ে রঙিন মোজাইক দিয়ে তালগাছ, পশুপাখি ও পিকাসো-সদৃশ চিত্র আঁকা শুরু করেন। সেই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এখন এক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে—আজ গোটা জাইমানিতাস শহরই যেন তার কল্পলোক ‘ফুস্তারল্যান্ডিয়া’ বা 'ফুস্তারের রাজ্য'।

কিউবার জাইমানিতাস থেকে এএফপি জানায়, রাজধানী হাভানার পশ্চিমে অবস্থিত এক নিরিবিলি জেলেপাড়া জাইমানিতাসে সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি পর্যটক ভিড় করেন—ইউরোপ, রাশিয়া ও মেক্সিকোর মতো দূরদেশ থেকেও আসেন পর্যটকরা। এই ছোট্ট শহরটি এখন যেন কোনো রূপকথার থিম পার্ক, এক বর্ণিল শিল্পপুরী, যেখানে প্রতিটি দেয়াল, ঘরবাড়ি এমনকি বাসস্টপও ফুস্তারের শিল্পকর্মে সজ্জিত।

৭৯ বছর বয়সী এই শিল্পী এএফপিকে বলেন, 'ক্যানভাস বা সিরামিকের ফরম্যাটগুলোকে আমি খুব ছোট মনে করতাম।' তাই পুরো শহরকেই তিনি বানিয়ে ফেলেছেন তার শিল্পকর্মের বিস্তীর্ণ
ক্যানভাস।

ফুস্তার জানান, শিল্পকর্ম বিক্রি করে পাওয়া অর্থ দিয়েই তিনি মোজাইক তৈরির সামগ্রী কেনেন। তার বিখ্যাত পুরোনো বাড়িটি এখন একটি আর্ট গ্যালারি—যেখানে তার চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য ও সিরামিক প্রদর্শিত হয়।

'আমি ভাবতেই পারিনি এত কিছু বানিয়ে ফেলবো। এটা যেন একধরনের সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়েছে,' হাসতে হাসতে বলেন শিল্পী ফুস্তার, যিনি এখন একটি ইলেকট্রিক মোবিলিটি স্কুটার ব্যবহার করেন।

ফুস্তার মূলত ‘নাইভ আর্ট’ ধারার শিল্পী, যেখানে শিশুসুলভ সরল রেখা, মৌলিক আকার ও উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার দেখা যায়। তাকে অনেকে ‘ক্যারিবীয় পিকাসো’ বা ‘কিউবান গাউদি’ বলেও অভিহিত করেন। তবে ফুস্তার জানান, তার প্রধান অনুপ্রেরণা ছিলেন রোমানিয়ার ভাস্কর কনস্টানটিন ব্রাঙ্কুশি, যিনি নিজের শহর তরগু জিউ-তে বড় আকারের বহিরাঙ্গন শিল্পকর্ম নির্মাণ করেছিলেন।

ফুস্তারের শিল্পে বারবার উঠে এসেছে তালগাছ, মোরগ ও গ্রামীণ মানুষের চিত্র। পাশাপাশি জনপ্রিয় প্রবাদ, কবিতার পঙ্‌ক্তি, লাল হৃদয়, গোলাপি হাতি ও ১৯৫৯ সালের কিউবান বিপ্লবের প্রতীকগুলো।'

৭৯ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা হোর্হে গনসালেস বলেন, 'জাইমানিতাস একসময় ছোট্ট একটা
অজপাড়া গাঁ ছিল, কারো নজরে আসত না।' ফুস্তার সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ওই লোকটা এগিয়ে এলো, এবং আনন্দ আর ভালোবাসা নিয়ে সবকিছু বদলে দিল।'

গনসালেসের নিজের ঘরটিও একসময় ছিল কাঠের তৈরি, এখন তা সিমেন্টের আর মোজাইকে মোড়া।

কয়েক বছর আগে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হলে মাদোনা ও শন পেনের মতো তারকাদেরও দেখা যায় ‘ফুস্তারল্যান্ডিয়ার’ রাস্তায় হাঁটতে।

ফুস্তার বলেন, 'আমি বিজ্ঞাপনে এক পয়সাও খরচ করিনি। সবকিছু এমনিতেই হয়ে গেছে।'

বর্তমানে তার পুরোনো বাড়ি আর্ট গ্যালারি ও জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এদিকে, সমুদ্রের কাছাকাছি এখন একটি নতুন বাড়ি তৈরি ও সাজানোর কাজে ব্যস্ত এই শিল্পী।