শিরোনাম
ঢাকা, ২১ মে, ২০২৫ (বাসস) : প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে চাল ও ডাল মিশিয়ে রান্না বসান ২২ বছর বয়সী মাহুত আলি বালোচ। এর সঙ্গে যোগ করেন প্রচুর পরিমাণে আখের গুড়। তারপর সেই মিশ্রণ দিয়ে তৈরি করেন কয়েক ডজন ছোট ছোট গোলাকৃতির বল। সেসব বলের ভেতরে যত্ন করে পুরে দেন মানুষের জন্য ব্যবহৃত যক্ষ্মার ট্যাবলেট। একটি দুটি নয় গুনে গুনে ৪’শটি।
এই চিকিৎসা পদ্ধতিটির প্রয়োগ করা হচ্ছে করাচির সাফারি পার্কে বসবাসরত দুই আফ্রিকান হাতির জন্য। মধুবালা ও মালিকা নামের দুটি হাতিই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত। পশু ও মানব চিকিৎসকদের সম্বন্বয়ে গঠিত যৌথ একটি দল এই প্রথমবারের মতো এমন বিশেষ চিকিৎসা পরিকল্পনা চালু করেছে।
৪ হাজার কেজি ওজনের বিশাল এই প্রাণীদের জন্য ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের ওজন অনুযায়ী। তবে শুরুর দিকে তারা নতুন এই রুটিনে অভ্যস্ত হতে পারেনি। প্রথম কয়েক দফায় তারা ওষুধযুক্ত খাবার মুখে নিয়েই ফেলে দেয় বা ছুড়ে মারে, এমনকি রাগে তাদের তত্ত্বাবধায়কদেরও তাড়া করে।
“হাতিকে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেওয়া সবসময়ই কঠিন,” বলেন শ্রীলঙ্কা থেকে আসা পশু চিকিৎসক বুদ্ধিকা বান্দারা। “প্রতিদিন আমাদের নতুন নতুন কৌশল নিতে হচ্ছে।
শুরুতে ওরা মানসিকভাবে চাপ অনুভব করছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।” এই চিকিৎসক এর আগে শ্রীলঙ্কায় এক ডজনের বেশি হাতিকে যক্ষ্মা থেকে সুস্থ হতে সহায়তা করেছেন।
মাহুত আলি বালোচও বলেন, “আমি জানি ওষুধগুলো অনেক তেতো,”।
২০০৯ সালে তানজানিয়া থেকে চারটি আফ্রিকান হাতি করাচিতে আনা হয়। তখন তারা বয়সে ছিল খুবই ছোট। এর মধ্যে নূর জেহান নামের হাতিটি ২০২৩ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মারা যায়। এরপর ২০২৪ সালের শেষ দিকে মারা যায় সোনিয়া। পরে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায়, যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিল হাতিটি।
এরপর বাকিদের শরীরেও পরীক্ষা চালানো হয়। মাধুবালা ও মালিকার শরীরেও টিবি পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর সিটি কাউন্সিলের মালিকানাধীন সাফারি পার্কে বিশেষ চিকিৎসক দল গঠন করা হয়।
শ্রীলঙ্কান চিকিৎসক বান্দারা বলেন, মানুষের কাছ থেকেই হাতির শরীরে এই সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে, তবে মাধুবালা, মালিকা বা সোনিয়ার দেহে সরাসরি উপসর্গ দেখা যায়নি।
হাতি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে পশু চিকিৎসক মহলেও। ইনডাস হসপিটাল অ্যান্ড হেলথ নেটওয়ার্কের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের প্রধান ডা. নাসিম সালাহউদ্দিন বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি হাতিও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে। আমি এবং আমার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হবে চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা। সবাই এখন এর চিকিৎসা পদ্ধতি ও অগ্রগতি জানতে চাইছে।”
চিকিৎসায় সহায়তাকারি চারজন মাহুত প্রতিদিন মুখে মাস্ক ও সুরক্ষা পোশাক পরে হাতিদের ওষুধ খাওয়ান। কারণ পাকিস্তানে প্রতি বছর ৫ লাখের বেশি মানুষ সংক্রামক ব্যাধি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন।
করাচি সাফারি পার্ক অতীতে নানা বিতর্কে জড়িয়েছে বন্দি পশুদের অবহেলা ইস্যুতে। এমনকি বিখ্যাত মার্কিন গায়িকা চের-এর উদ্যোগে একবার একটি হাতিকে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল।
তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক দল এখন আশাবাদী। তারা বিশ্বাস করেন, এক বছরের চিকিৎসা পরিকল্পনা অনুসরণ করলে মাধুবালা ও মালিকাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
করাচির প্রখর রোদে হাতিরা যখন ঠান্ডা পানিতে জলকেলিতে ব্যস্ত, তখন তাদের পাশে নীরবে দাঁড়িয়ে চিকিৎসকরা একটা কথাই ভাবছে, এই জাম্বো চ্যালেঞ্জ সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়।