বাসস
  ২১ মে ২০২৫, ১২:১৯

ইইউ সাথে নতুন অংশীদারিত্ব চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাজ্য 

ঢাকা, ২১ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাজ্য সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিকে নতুন যুগের সূচনা হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তা প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। লন্ডন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মতে, ইইউর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুনঃস্থাপন তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

এটি ইইউর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের অন্যতম প্রধান যুক্তি। 

লেবার নেতা স্টারমার মঙ্গলবার পার্লামেন্টে বলেন, এই চুক্তি, মে মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে (আমাদেরকে) যুক্তরাজ্যকে ‘পুরনো বিভেদের রাজনীতি’ থেকে বের করে এনে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে ভবিষ্যতের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।

২০২১ সালের ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যে শুল্ক ফিরিয়ে না আনলেও নতুন বাণিজ্য বাধা সৃষ্টি করেছিল।

ব্রিস্টল ও অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সোমবার স্বাক্ষরিত নতুন চুক্তিতে খাদ্য ও পানীয় পণ্যের উপর পশুস্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরীক্ষা ও বিধিনিষেধ শিথিল করার ফলে যুক্তরাজ্যের ইইউতে রপ্তানি ২২ শতাংশেরও বেশি বাড়তে পারে। এছাড়া যুক্তরাজ্য এখন ইইউর কার্বন সীমান্ত কর থেকেও অব্যাহতি পেয়েছে। যার ফলে বছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে যুক্তরাজ্য।

২০২১ সালে ব্রেক্সিট-পরবর্তী যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল, তা শুল্ক না থাকলেও নতুন অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। নতুন চুক্তিতে খাদ্য ও পানীয় পণ্যের রপ্তানিতে পশুস্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম শিথিল করা হয়েছে, যা এক গবেষণায় দেখা গেছে ইইউতে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি ২২ শতাংশ বাড়াতে পারে। এছাড়া যুক্তরাজ্য এখন ইইউর কার্বন সীমান্ত কর থেকেও অব্যাহতি পেয়েছে, যা বছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করতে পারে। 

শিল্প সংস্থা ইউকে স্টিল এটিকে "ইইউর সাথে ইস্পাতের বাণিজ্য বিরোধ কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছে।

সরকার আশা করছে, ২০৪০ সালের মধ্যে এই চুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৯ বিলিয়ন ইউরো অর্থনৈতিক লাভ হবে।  

যদিও এটি যুক্তরাজ্যের মোট জিডিপির মাত্র ০.৩ শতাংশ।

লন্ডন ও ব্রাসেলস পারস্পরিক সংলাপ জোরদার করতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি চুক্তি করেছে। রাশিয়ার হুমকি, সাইবার ঝুঁকি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কার কারণে এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। 

তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা থিঙ্কট্যাঙ্ক আরইউসিআই -এর এড আর্নল্ড বলেন, এই চুক্তিতে কোনও বাস্তব লক্ষ্য বা অগ্রগতি নেই। শুধু ভবিষ্যতে আরও কথা বলার অঙ্গীকার রয়েছে।

তিনি বলেন, অংশগ্রহণ বিবেচনা মানে এটি বাধ্যতামূলক নয়, তাই এতে কোনওভাবেই সরকারের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয় না।

সেন্টার ফর ইউরোপীয় সংস্কারের উপ-পরিচালক ইয়ান বন্ড বলেন, প্রকৃত প্রশ্ন হচ্ছে যুক্তরাজ্য প্রতিরক্ষা শিল্পে ইইউর সঙ্গে কতটা সহযোগিতা করবে। সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

তিনি আরও বলেন, এটি অবাক করার মতো নয়, তবে এটা স্পষ্ট করে দেয় যে এখনো অনেক কাজ বাকি।

রক্ষণশীল দল ও ইউরোসেপ্টিক রিফর্ম ইউকে পার্টি সরকারের বিরুদ্ধে ইইউর কাছে সার্বভৌমত্ব ছাড়ার অভিযোগ এনেছে। বিরোধীদলীয় নেতা কেমি ব্যাডেনোচ মঙ্গলবার চুক্তিটিকে বিশ্বাসঘাতকতা ও ব্যর্থতা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

দ্য সান ট্যাবলয়েড পত্রিকা অভিযোগ করেছে, স্টারমার ব্রাসেলসের নিয়ম মেনে নিতে, ইইউ বিচারকদের রায় মেনে চলতে এবং আরও ১২ বছর ধরে ব্রিটিশ জলসীমায় ফরাসি নৌকা চলতে দেওয়ার শর্তে রাজি হয়েছেন।

চুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে ইইউর নিয়ম অনুসরণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।

জাতীয় কৃষক ইউনিয়নের (এনএফইউ) সভাপতি জানিয়েছেন, এসব নতুন নিয়মের ফলে যুক্তরাজ্য তার নিজস্ব অঞ্চলে প্রয়োগ করা নিয়মের ওপর খুব কম প্রভাব রাখতে পারবে।

তিনি বলেন, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রক সমন্বয় একটি বড় প্রতিশ্রুতি, যেখানে যুক্তরাজ্যের বক্তব্য খুব কম থাকবে।

যদিও মৎস্য খাতে যুক্তরাজ্য প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছাড় দিয়েছে। ইইউকে ২০৩৮ সালের জুন পর্যন্ত আরও ১২ বছরের জন্য ব্রিটিশ জলসীমায় প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এই খাতটি দেশের জিডিপির মাত্র ০.০৩ শতাংশ।

ব্রিটিশ জেলেরা ইতিমধ্যেই তাদের তিন-চতুর্থাংশ মাছ ইইউতে রপ্তানি করেন। মান সংক্রান্ত এই চুক্তি তাদের জন্য ‘অত্যন্ত উপকারী’ হবে বলে মন্তব্য করেন বন্ড।

সোমবারের শীর্ষ সম্মেলনের পরেও বেশ কিছু বিষয় অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। যেমন ইইউ-সমর্থিত যুব চলাচল প্রকল্প ও ইরাসমাস শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচিতে যুক্তরাজ্যের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন, যেগুলো ব্রাসেলসের অগ্রাধিকার।

লন্ডন তার পক্ষ থেকে চায় শিল্পীদের জন্য ভিসা নিয়ম শিথিল করা হোক এবং পেশাদার যোগ্যতার পারস্পরিক স্বীকৃতি নিশ্চিত হোক। উভয় পক্ষ প্রতি বছর একটি দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিছু পর্যবেক্ষক বলছেন, সুইজারল্যান্ডের মতো একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।

বিশেষ করে গতিশীলতার ক্ষেত্রে, যেখানে পারস্পরিক সুবিধা রয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট চুক্তি করার চিন্তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্ড।