বাসস
  ২০ মে ২০২৫, ১২:৫০

ইউক্রেনের সাথে জি-৭ অর্থ নেতাদের বৈঠক

ঢাকা, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস) : কানাডায় জি-৭ দেশগুলোর শীর্ষস্থানীয় অর্থ নেতাদের সমাবেশ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক আরোপের ফলে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো যখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন ইউক্রেনের যুদ্ধসহ বিভিন্ন উদ্বেগের বিষয়গুলোও সামনে থাকবে। 

কানাডার ব্যানফ থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলমান বৈঠকে নেতারা আলোচনা করবেন। অংশগ্রহণকারীরা ইউক্রেনের বিষয়ে একটি সাধারণ অবস্থান খুঁজবেন, অন্যদিকে বাজার-বহির্ভূত অনুশীলনের মতো বিষয়গুলোও এজেন্ডায় থাকবে। কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলবার্টায় জি-৭ অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের বৈঠকে ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী সের্গেই মার্চেনকোও উপস্থিত থাকবেন। 

২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের পর - ট্রাম্প এই বছর প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসার পর থেকে-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রতি জি-৭ গণতন্ত্রের মধ্যে একটি অনিশ্চিত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এক সময় ব্যাপকভাবে একীভূত হয়ে যাওয়া জি-৭ : ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের দ্বারা খানিকটা রােটে ফাটল ধরেছিল। কারণ, প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় ট্রাম্প রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং মিত্র এবং প্রতিযোগী উভয়ের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। 

সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলার পর ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন শান্তি আলোচনা শুরু করবে। আলবার্টার ব্যানফে জি-৭ বৈঠকে মার্কিন অংশগ্রহণ সম্পর্কে ব্রিফ করা একটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ‘শুধুমাত্র একটি বিবৃতি দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণে নয়’। তারা বলেছে, একটি ঐক্যমত্য ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। 

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এরআগে জুনে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং ইউক্রেনের মার্চেনকো মঙ্গলবার মিডিয়া কর্মীরা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন। মার্কিন ট্রেজারি মুখপাত্র বলেছেন, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ‘জি-৭ এবং জি-৭-বহির্ভূত উভয় দেশের ভারসাম্যহীনতা এবং বাজার-বহির্ভূত অনুশীলন মোকাবেলায়’ গ্রুপটিকে ‘মূল নীতিতে ফিরিয়ে আনার’ চেষ্টা করবেন। 

মার্কিন অংশগ্রহণ সম্পর্কে অবহিত সূত্রটি উল্লেখ করেছে যে, জি-৭-এর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা অগ্রহণযোগ্য যে দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ খাতকে প্লাবিত করার জন্য চীনের অতিরিক্ত শিল্প ক্ষমতাকে অনুমতি দেবে এবং এটি এজেন্ডায় থাকবে। 

গোষ্ঠীটি বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর নীতি এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করলেও বিশ্লেষকরা অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা মোকাবেলায় নেতাদের অপ্রত্যাশিততার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের ডেপুটি ডিরেক্টর অনন্যা কুমার বলেছেন, যদিও আলোচনা প্রায়শই সদস্য এবং অতিথিদের মধ্যে প্রধান নীতিগত অগ্রাধিকার, যেমন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, ট্রাম্পের শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাব একটি স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। 

তিনি এএফপি’কে বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ট্রাম্প বেশিরভাগ মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অর্থনীতির ওপর উচ্চ হারের হুমকি। তিনি ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ি আমদানিতেও শুল্ক আরোপ করেছেন, যা জি-৭ দেশগুলোর সাথে দূরত্ব বাড়িয়েছে। ব্রিটেনের সাথে সাম্প্রতিক চুক্তি বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তায় ঢ়াকা পড়ে আছে। 

গত মাসে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল শুল্কের প্রভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে কানাডার মতো শীর্ষ মার্কিন অংশীদারদের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কুমার বলেছেন ‘এটি ঘরে হাতির মতো’। ‘আমি মনে করি সাফল্যের একটি সম্ভাব্য সূচক হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর সাথে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হতে এবং আলোচনা করতে চায়।’ 

কর্মকর্তারা এএফপি’কে বলেছেন, তারা এই সপ্তাহে বাণিজ্য চুক্তি প্রকাশের আশা করছেন না, তারা বজায় রেখেছেন যে দলগুলো আলোচনায় অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং ব্যানফ সমাবেশ হবে সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পাওয়ার আরেকটি সুযোগ। নেতারা বেসেন্টকে খুঁজবেন, যিনি চীনের সাথে উত্তেজনা হ্রাসে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন। গবেষণা গ্রুপ হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইকোনমিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্ল ওয়েইনবার্গ বলেছেন, ‘তিনি দেখিয়েছেন, তিনি ঘরে প্রাপ্তবয়স্ক হতে পারেন।’ কিন্তু বেসেন্ট ‘ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মধ্যে রয়েছেন’। 

ওয়েইনবার্গ এএফপি’কে বলেছেন, আটলান্টিক কাউন্সিলের কুমার বলেছেন, বাণিজ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অন্যান্য বিষয়ে অগ্রগতিতে সহায়তা করবে। তিনি আশা করেছেন, সদস্যরা ‘ইউক্রেনের সাথে স্থিতাবস্থার প্রতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি অর্জন করবে। 

কানাডার অর্থমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেন ইউক্রেনের পরিস্থিতির পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতি, অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা এবং নিরাপত্তা বিষয়ক অধিবেশনের সহ-সভাপতিত্ব করবেন। আর্থিক অপরাধ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক অধিবেশনও অনুষ্ঠিত হবে।