বাসস
  ১৯ মে ২০২৫, ১৮:৩৯

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনকে ফোন করবেন ট্রাম্প

ঢাকা, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনে ২০২২ সালের রুশ আগ্রাসনের পর শুরু হওয়া দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ থামাবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার কূটনৈতিক উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি আনতে পারেনি।

সপ্তাহান্তে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার ‘রেকর্ড’ ড্রোন হামলার পর সোমবার মস্কো বলেছে, তারা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ শেষ করতে চায় এবং ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলেও উল্লেখ করেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে অর্জন করাই উত্তম। আমরা ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টাকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছি।’

গত সপ্তাহে তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন সরাসরি বৈঠকে বসে। তবে বৈঠক কোনো যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি ছাড়াই শেষ হয়। উভয় পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করে। ইউক্রেন দাবি করে, রাশিয়া নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি ‘ডামি প্রতিনিধি দল’ পাঠিয়েছে।

এরপর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইউক্রেনে চলমান ‘রক্তস্নান’ থামানোর প্রয়াসে তিনি পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন। যুদ্ধ ইতোমধ্যে দেশটির বড় অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

তিনি জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ন্যাটো কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলবেন। ‘আমি আশাবাদী, যুদ্ধবিরতি হবে এবং এই ভয়াবহ সহিংস যুদ্ধের অবসান ঘটবে,’ বলেন ট্রাম্প।

তবে পুতিনের ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত সংযত থাকলেও ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্প অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন। তিনি দাবি করেন, যতক্ষণ না তিনি পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছেন, ততক্ষণ কিছুই হবে না।

বন্দিবিনিময় ও শান্তি আলোচনার চেষ্টা

ইস্তাম্বুল বৈঠকে রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের ১,০০০ বন্দি বিনিময়ে সম্মত হয় এবং একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ধারণা বিনিময় করে। তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের বিরুদ্ধে শান্তি প্রস্তাব উপেক্ষা করার অভিযোগ তুলেছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার দাবিও তুলেছে।

রোববার ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে মিলিত হন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের মুখপাত্র জানান, ‘নেতারা নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা এবং পুতিনের শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া যদি আন্তরিকভাবে আলোচনায় না বসে, তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’

‘মূল কারণ’ এবং ইউক্রেনের অবস্থান

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মার্জ বলেন, ‘পুতিনকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি ও শান্তি আলোচনায় সম্মত হতে হবে।’ তিনি জানান, ইউরোপীয় নেতারা সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে আবারও কথা বলার পরিকল্পনা করছেন।

ভ্যাটিকানে পোপ লিওর উদ্বোধনী প্রার্থনা অনুষ্ঠানের পর জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানেও সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা ও ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

এই বৈঠক ছিল জেলেনস্কি ও ভ্যান্সের ফেব্রুয়ারির হোয়াইট হাউস বৈঠকের পর প্রথম মুখোমুখি দেখা। সেসময় ভ্যান্স জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে ‘অশ্রদ্ধাশীল’ আখ্যা দেন এবং ট্রাম্প জানান, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় জেলেনস্কির হাতে কোনো কার্যকর কার্ড নেই।

যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা

মাঠপর্যায়ে রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের সুমি ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে দুটি গ্রাম দখল করেছে। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানায়, রাশিয়া রাতভর ১১২টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ৭৬টি প্রতিহত করা হয়েছে।

রুশ রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘এই সংকটের মূল কারণ দূর করা, স্থায়ী শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’ তবে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

রাশিয়া যে ‘মূল কারণ’ তুলে ধরে তা সাধারণত ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের প্রতি তাদের অভিযোগের অংশ। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনকে ‘ডি-নাৎসিফাই’ ও সামরিকীকরণ মুক্ত করা, রুশ ভাষাভাষীদের সুরক্ষা দেওয়া, ন্যাটো সম্প্রসারণ ঠেকানো এবং ইউক্রেনের পশ্চিমমুখী অবস্থান রোধ করা।

কিয়েভ ও পশ্চিমা শক্তিগুলো রাশিয়ার এসব দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয় এবং বলে, এটি রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা মাত্র।