শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : দামেস্কের কাছে একটি অশ্বারোহণ প্রতিযোগিতায় সোনা জয়ের লক্ষ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ২৫ বছর বয়সী জিয়াদ আবু আল-দাহাব—এক সময়ের এই খেলার আসরটি সিরিয়ার আসাদ পরিবার ও তাদের ঘনিষ্ঠ মহল এককভাবে দখলে রেখেছিল।
তিনি বলেন, 'ফলাফল আগে থেকেই নির্ধারিত থাকত, সব সময় সরকারঘনিষ্ঠদের পক্ষে যেত।'
'আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল তৃতীয় স্থান অর্জন করা। কিন্তু এখন আমি প্রথম হওয়ার কথা ভাবতে পারি, কারণ আমার নতুন ঘোড়াটি বেশ ভালো।'
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, তার আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠরা নানা ক্ষেত্রে সুবিধা ভোগ করতেন। তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইসলামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন এক আকস্মিক সামরিক অভিযানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
আশির দশকের শেষ ও নব্বইয়ের দশকে সিরিয়ায় অশ্বারোহন ক্রীড়ার ব্যাপক প্রসার ঘটে বাশারের বড় ভাই বাসেল আল-আসাদের হাত ধরে। পিতা হাফেজ আল-আসাদের উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত হচ্ছিলেন বাসেল, কিন্তু ১৯৯৪ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। এরপর ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট হন বাশার।
বাসেল নিজেও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং নিজেকে ‘সিরিয়ার সেরা অশ্বারোহী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইতেন। তার জনপ্রিয়তার হাত ধরে অশ্বারোহণ খেলাটি সিরিয়ার অভিজাত শ্রেণির প্রতীক হয়ে ওঠে।
আবু আল-দাহাব বলেন, 'সরকারঘনিষ্ঠরা ইউরোপীয় ঘোড়া ব্যবহার করত, যেগুলো স্থানীয় ঘোড়াদের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিল। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা ছিল একরকম অসম্ভব।'
তিনি যখন বালুতে নিজের ঘোড়াকে হাঁটাচ্ছিলেন, তখন বলেন, 'ক্ষমতাসীন পরিবারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করাই ছিল অসম্ভব।'
- অসম প্রতিযোগিতা -
দামাস্কাসের কাছে ডিমাস অশ্বারোহন ক্লাবের বাইরে এখনো দাঁড়িয়ে আছে বাসেল আল-আসাদের মূর্তি, যদিও তার মুখ এখন নতুন সিরীয় পতাকায় ঢাকা।
এই খেলায় আসাদ পরিবারের আধিপত্য পরবর্তী প্রজন্মেও বজায় ছিল, যার মধ্যে রয়েছেন বাশারের ভাই মাহেরের কন্যা শাম।
শাম সিরিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং প্রায়শই ভালো অবস্থানে থাকতেন। তবে গণমাধ্যমে তার অতিরিক্ত উপস্থিতি বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল; সমালোচকদের মতে, এসব ছিল নিছক প্রপাগান্ডা।
অশ্বারোহণ খেলায় আসাদ পরিবারের প্রভাব অনেককেই দূরে সরিয়ে রেখেছিল। ২৬ বছর বয়সী মুয়ানা শাকের বলেন, আসাদ পরিবারের ভয়ে তার বাবা তাকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিষেধ করেতেন।
তিনি বলেন, 'আমার বাবা আমাকে খেলাটা চর্চা করতে দেননি। বলতেন, ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা অসম্ভব।'
শাকের বলেন, 'আমার বাবা কোনোভাবেই আমাদের যেন আসাদ পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হই, তা নিশ্চিত করতেন। তিনি আমাকে সেই অশ্বারোহীর গল্প বলেছিলেন, যিনি বাসেল আল-আসাদকে হারানোর পর জেলে গিয়েছিলেন।'
তিনি বলছিলেন আদনান কাসারের কথা। কাসার ছিলেন একজন খ্যাতনামা অশ্বারোহী যিনি ১৯৯৩ সালে বাসেলকে হারানোর পর বিনাবিচারে বন্দী হন। তার বিরুদ্ধে বাসেলকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হলেও অনেকের বিশ্বাস, মূল কারণ ছিল তার খেলায় সাফল্য। ২১ বছর পর তিনি প্রেসিডেনশিয়াল ক্ষমায় মুক্তি পান।
শাকের বলেন, 'আমি অনেকদিন খেলাটি থেকে দূরে ছিলাম, কিন্তু এখন শক্তভাবে ফিরে আসার সময়। আমি শাকের পরিবার থেকে এসেছি, আসাদ পরিবার থেকে নয়।'
- স্বপ্নপূরণ -
৪৮ বছর বয়সী শাদি আবু আল-দাহাব বর্তমানে প্রায় ২৪০টি ঘোড়ার দেখভাল করছেন—এর মধ্যে কিছু রয়েছে আসাদ পরিবারের সাবেক ইউরোপীয় ঘোড়াও।
তিনি বলেন, 'প্রায় ৪০টি ঘোড়া কেবল আসাদ পরিবারের জন্য বরাদ্দ ছিল। অন্য কেউ ওদের কাছে যাওয়ারও সুযোগ পেত না।'
তবে এখন দৃশ্যপট বদলেছে। শাদি বললেন, 'আমরা প্রতিদিনই নতুন প্রতিভা আবিষ্কার করছি। উৎসাহী শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে... অনেক অশ্বারোহী এখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে।'
তার সহকর্মী প্রশিক্ষক সালাহ আল-আহমাদ (৫২) হাসিমুখে তাকিয়ে ছিলেন, যখন তার ছেলে শাম আল-আসাদের একদা ব্যবহার করা ঘোড়া ‘টপসি’কে নিয়ে অনুশীলন করছিল।
আহমাদ বলেন, 'ও একসময় স্বপ্ন দেখত ঘোড়াটিকে একবার ছুঁয়ে দেখার, মাথায় হাত রাখার। এখন নতুন যুগে ঘোড়াটি ওর সঙ্গেই আছে, এবং ও ইতোমধ্যে দুটি প্রতিযোগিতা জিতেছে।'
'এটা যেন স্বপ্নপূরণ।'