শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ মে, ২০২৫ (বাসস) : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেহে ‘আগ্রাসী’ ধরনের প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে, যা ইতোমধ্যে তার হাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার বাইডেনের দপ্তর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এএফপি জানায়, বিবৃতিতে বলা হয়, গত শুক্রবার ৮২ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাট নেতার প্রস্রাবজনিত উপসর্গ বেড়ে যাওয়ার পর নতুন একটি প্রোস্টেট নডিউল দেখা গেলে তার দেহে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এটি রোগটির একটি আগ্রাসী রূপ হলেও ক্যান্সারটি হরমোন-সংবেদনশীল, যা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার চিকিৎসকদের সঙ্গে সম্ভাব্য চিকিৎসা বিকল্প পর্যালোচনা করছেন।'
বাইডেনের চেয়ে মাত্র চার বছরের ছোট প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বাইডেনের বয়স ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে বিদ্রুপ করে আসলেও এই খবরে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেনের প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, 'আমরা জিল ও পুরো পরিবারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং জোর কণ্ঠে জো’র দ্রুত ও সফল আরোগ্য কামনা করি।'
বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, 'জো একজন লড়াকু মানুষ।'
বাইডেন গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন।
তিনি আরও লেখেন, 'আমি জানি, তিনি তার জীবন ও নেতৃত্বের চিরচেনা শক্তি, সহনশীলতা ও আশাবাদ দিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন। আমরা তার সম্পূর্ণ ও দ্রুত সুস্থতার ব্যাপারে আশাবাদী।'
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক পোস্টে বাইডেনের জন্য আশির্বাদ ও শুভকামনা জানান। তিনি বলেন, 'সব ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় অগ্রগতির জন্য জো’র চেয়ে বেশি উদ্যোগ আর কেউ নেয়নি। আমি নিশ্চিত, নিজের স্বভাবসিদ্ধ অটলতা ও সম্মানবোধ নিয়ে তিনি এই রোগের বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যাবেন।'
বাইডেনের বয়সী অনেক পুরুষের প্রোস্টেটে ক্যান্সার কোষ পাওয়া গেলেও সাধারণত তা ধীরে বাড়ে। হরমোন থেরাপি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যা টিউমার ছোট করতে এবং ক্যান্সার বৃদ্ধির গতি কমাতে সাহায্য করে, তবে এটি কোনো চূড়ান্ত চিকিৎসা নয়।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বাইডেনের ক্যান্সার 'গ্লিসন স্কোর ৯ (গ্রেড গ্রুপ ৫)' পর্যায়ের।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, প্রোস্টেট ক্যান্সার যদি ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ দেখায়, তবে তাকে গ্রেড ৫ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গ্লিসন স্কোর সাধারণত প্রোস্টেটের দুটি এলাকাজুড়ে বিদ্যমান প্রধান ক্যান্সারের গ্রেড যোগ করে নির্ধারণ করা হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাপ্তরিক দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। তার প্রেসিডেন্সি জুড়েই স্বাস্থ্য ও বয়স সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
ডেমোক্র্যাট দলীয় ভোটারদের একাংশও বহুদিন ধরে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন—এই বয়সে বাইডেন মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রেসিডেন্টের মতো কষ্টসাধ্য দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট সক্ষম কি না।
এই বিষয়ে বাইডেনের সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল: 'আমাকে দেখো।'
কিন্তু গত জুলাইয়ে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি পুনর্নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। ওই বিতর্কে তার মানসিক সক্ষমতা ও মস্তিষ্কের স্থিতিশীলতা নিয়ে আবারও তীব্র উদ্বেগ দেখা দেয়।
তবে বাইডেন দাবি করে আসছেন, তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারতেন। তবে তার অবনতির ইঙ্গিত নিয়ে কর্মীদের এবং ডেমোক্র্যাট শিবিরের শীর্ষস্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এই আলোচনা আরও তীব্র হয় সিএনএনের সাংবাদিক জেক ট্যাপার ও অ্যাক্সিওসের আলেক্স থম্পসনের লেখা বই 'অরিজিনাল সিন: প্রেসিডেন্ট বাইডেনস ডিক্লাইন, ইটস কাভার-আপ, অ্যান্ড হিজ ডিজাস্ট্রাস চয়েস টু রান এগেইন' প্রকাশের খবরে। বইটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হওয়ার কথা।
গত সপ্তাহে বাইডেনের একটি নতুন অডিও রেকর্ডিং সামনে আসে, যেখানে তিনি কিছু ঘটনা ও তারিখ মনে করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এটি তার প্রেসিডেন্ট থাকার সময়কার মানসিক সক্ষমতা নিয়ে বিতর্ক ফের উসকে দেয়।
ব্যক্তিগত জীবনেও বাইডেন নানা ট্র্যাজেডির শিকার। ১৯৭২ সালে মার্কিন সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ক’দিন পর গাড়ি দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী ও শিশুকন্যা নিহত হন।
১৯৮৮ সালে তার মস্তিষ্কে দু’বার অ্যানিউরিজম অপারেশন করা হয়।
২০২৩ সালে তার বুকে একটি বেসাল সেল কারসিনোমা নামের ত্বকের ক্যান্সার কোষ অপসারণ করা হয়। এর আগেও তার শরীরে নন-মেলানোমা ধরনের ত্বকের ক্যান্সার অপসারণ করা হয়েছিল।