বাসস
  ১৭ মে ২০২৫, ২১:০৪

কানের আসরে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিল নলিউড

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ প্রায় ৮০ বছর পর অবশেষে নাইজেরিয়ার একটি চলচ্চিত্র কানের মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে। রোববার ‘আর্থহাউজ’ সিনেমার মঞ্চে উঠছে নলিউডের ছবি ‘মাই ফাদার্স শ্যাডো’।

ফ্রান্সের কান থেকে এএফপি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প বাজেটের, তড়িঘড়ি নির্মিত জনমুখী সিনেমার জন্য সমালোচিত হয়ে আসা লেগোসভিত্তিক ব্যস্ততম চলচ্চিত্রশিল্প নলিউড এখন আন্তর্জাতিক গৌরবের আলোয় উদ্ভাসিত। যদিও হলিউডের চেয়ে বহু গুণ বেশি চলচ্চিত্র বানালেও, আফ্রিকার বাইরের মূলধারার দর্শকদের কাছে এখনও  পৌঁছাতে লড়াই করছে এই ইন্ডাস্ট্রি।

নাইজেরিয়ানরা যুগের পর যুগ ধরে দেখে আসছে ভালোবাসা, দারিদ্র্য, ধর্ম ও দুর্নীতির নানা গল্প—যার সঙ্গে থাকে অতিপ্রাকৃত উপাদান এবং আধুনিক ও প্রথাগত মূল্যবোধের সংঘর্ষ। তবে এসব সিনেমা বহু সময়েই নির্মিত হয়েছে অতি স্বল্প বাজেট ও ভিডিও ক্যামেরায় শুটিংয়ের মাধ্যমে।

নলিউডের সেই পুরোনো ভাবমূর্তি এবার পাল্টে দিতে পারে ‘মাই ফাদার্স শ্যাডো’—যেটি প্রথমবারের মতো কানে ‘অফিশিয়াল সিলেকশন’-এ স্থান পেয়েছে। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আকিনোলা ডেভিস।

নাইজেরিয়া সরকারের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা প্রিন্স বাবা আগবা বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় জায়গা পাওয়া প্রমাণ করে, নাইজেরিয়ান সিনেমা এখন পূর্ণতা পেয়েছে।’ তিনিও কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে উপস্থিত হয়েছেন।

১৯৯৩-এর সামরিক অভ্যুত্থানের পটভূমিতে

আকিনোলা ডেভিসের এই প্রথম ফিচার ফিল্মের পটভূমি ১৯৯৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থান, যখন সেনাবাহিনী গণভোট বাতিল করে এবং সানি আবাচা ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ‘এই হারিয়ে যাওয়া সুযোগ, গণতন্ত্রের স্বপ্ন এক ঝটকায় হারিয়ে যাওয়া আজও আমাদের জাতিকে আঘাত করে।’

ছবিটি সেমি-অটোবায়োগ্রাফিক, যেখানে ‘গ্যাংস অব লন্ডন’ অভিনেতা সোপি দিরিসু অভিনীত চরিত্রটির পেছনে দুই ছোট ছেলে লেগোস শহরে তাকে অনুসরণ করে অভ্যুত্থানের সময়।

‘একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়’

প্রিন্স আগবা বলেন, এটি কোনো ‘একক ঘটনাবলীর ব্যতিক্রমী উদাহরণ’ নয়। এডিটি এফফিয়ংয়ের ক্রাইম থ্রিলার ‘দ্য ব্ল্যাক বুক’ গত বছর নেটফ্লিক্সে বৈশ্বিক চার্টের শীর্ষে ছিল, এমনকি দক্ষিণ কোরিয়াতেও।

তিনি আরও জানান, নাইজেরিয়ান চলচ্চিত্র ইতোমধ্যে সানড্যান্সসহ বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে এবং পুরস্কারও জিতেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন ‘শাইন ইওর আইজ’ (বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব) এবং ‘এইইমোফে (দিস ইজ মাই ডিজায়ার)’, যেটি এখন ক্রাইটেরিয়ন কালেকশনের অংশ।

‘আমরা এখনো প্রচুর সিনেমা তৈরি করছি—তবে এখন সব স্তরে: কেউ বানাচ্ছে ১০ লাখ ডলারের সিনেমা, কেউ বানাচ্ছে ১০ হাজার ডলারের; কিন্তু সবার গল্পেই আছে নাইজেরিয়ার আত্মা, হৃদয় আর স্পন্দন,’ বলেন আগবা।

চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য পার্লামেন্টে বিবেচনাধীন কর রেয়াতের বিলটি বাস্তবায়িত হলে নলিউডের আন্তর্জাতিক প্রসারে তা গেমচেঞ্জার হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

স্ট্রিমিংয়ের সুযোঘ, চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে

করোনা মহামারির সময় নেটফ্লিক্স যেমন ‘ব্লাড সিস্টারস’, ‘ম্যান অব গড’ এবং সংগীতনির্ভর ‘আয়িনলা’ তুলে নেয়, তেমনি স্থানীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মও জনপ্রিয়তা পায়, বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর নাইজেরিয়ার ‘কানিউড’ অঞ্চলে।

তবে গত বছর অ্যামাজনের আফ্রিকা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু বাধার মুখে পড়েছে নলিউড। নেটফ্লিক্সও কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা ‘সাধারণভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে’ বলেই জানায়।

তবু স্থানীয় বড় প্রযোজকরা সুযোগ নিচ্ছে। ইবনোলাইফ গ্রুপ—নলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান—নিজস্ব স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চালু করতে যাচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা মো আবুদু বলেন, ‘আমরা ছোট করে শুরু করব, কিন্তু এগিয়ে যাব। আর আমরা অপেক্ষা করতে পারি না যে অন্যরা এসে এগুলো করে দেবে।’ এ বছর লন্ডনে নাইজেরিয়ান সংস্কৃতি কেন্দ্রও খুলতে যাচ্ছেন তিনি।

‘বড় চ্যালেঞ্জ আছে, তবে অগ্রগতি দৃশ্যমান’

আগবা স্বীকার করেন, মোবাইল নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতাসহ প্রযুক্তি ও পরিকাঠামোগত সমস্যা এখনো আছে, কারণ অধিকাংশ সিনেমাই মোবাইলে দেখা হয়। তবে উন্নতিও হচ্ছে।

তার ভাষায়, ‘আমরা আমাদের (সিনেমা) স্ক্রিন সংখ্যা দ্বিগুণ করে ৩০০-তে নিতে চাই। অথচ ব্রাজিলে, আমাদের মতো জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও সেখানে স্ক্রিন সংখ্যা ৩ হাজারেরও বেশি।’

আফ্রোবিটসের পাশাপাশি নলিউডও এখন নাইজেরিয়ার প্রধান ‘সফট পাওয়ার’। আর তার এক প্রমাণ হলো, ‘দ্য হলিউড রিপোর্টার’-এর ‘আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে ৪০ জন প্রভাবশালী নারীর তালিকার শীর্ষে আছেন মো আবুদু, যেটি কানের আগমুহূর্তে প্রকাশিত হয়েছে।