বাসস
  ১৭ মে ২০২৫, ২০:৪৬
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ২০:৫৩

আরব সম্মেলনে স্পেনের আহ্বান: গাজায় ‘গণহত্যা বন্ধে’ ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়াতে হবে

ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : গাজায় ইসরাইলের ঘোষিত নতুন সামরিক অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাগদাদে অনুষ্ঠিত আরব লিগ সম্মেলনে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধে’ ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

বাগদাদ থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের এখনই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।’ তিনি গাজার জনগণের ‘পুনঃপুন বাস্তুচ্যুতি’ ও তাদের ‘গাজার বাইরে জোরপূর্বক স্থানান্তরের যেকোনো পরিকল্পনার’ বিরোধিতা করেন।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানান, তিনি যেন গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ‘সব ধরনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ’ গ্রহণ করেন।

গালফ সফর শেষ করেই এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ট্রাম্প। সফর চলাকালেই তিনি এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রস্তাবে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করে এটিকে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা বানাতে পারে।’ এই প্রস্তাবে গাজাবাসীদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার ইঙ্গিত থাকায় তা আরব নেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। এর জবাবে গত মার্চে কায়রো সম্মেলনে তারা গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি বিকল্প পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।

ইসরাইলি বাহিনী শনিবার গাজায় নতুন অভিযান শুরু করেছে বলে জানায়। সেনাবাহিনী একে ‘অভিযানের প্রাথমিক ধাপ’ হিসেবে উল্লেখ করে। হামাসের ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামলার ১৯ মাস পর এ অভিযান শুরু হলো।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেন, ‘বিশ্বনেতাদের উচিত ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ানো, আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে। গণহত্যা বন্ধে এখনই পদক্ষেপ প্রয়োজন।’

তিনি জানান, ইসরাইলের যুদ্ধপদ্ধতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মতামত চেয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছে তার সরকার।

তিনি বলেন, গাজায় ‘অগ্রহণযোগ্য সংখ্যক’ মানুষের মৃত্যু মানবতার নীতিমালার পরিপন্থী।

আরব সহায়তা তহবিল ও গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা

ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি সম্মেলনে বলেন, তার দেশ ‘সংকট-উত্তর পুনর্গঠনের জন্য আরব তহবিল’ গঠনের পক্ষে। তিনি গাজার পুনর্গঠনে ২ কোটি ডলার এবং লেবাননের জন্যও সমপরিমাণ অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেন।

ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন বলেন, সম্মেলনে আগের আরব লিগ সিদ্ধান্তগুলোর পুনঃসমর্থন দেওয়া হবে, যা গাজার পুনর্গঠন ও ট্রাম্পের বিতর্কিত প্রস্তাবের প্রতিকারে গৃহীত হয়েছিল।

এ সপ্তাহেই ট্রাম্প আবারও বলেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র ‘গাজা দখল করুক এবং এটিকে ‘স্বাধীনতার এলাকা’ বানাক।’

সিরিয়া, ইরান ও আঞ্চলিক বাস্তবতা

দীর্ঘ অস্থিরতা ও সংঘর্ষে বিপর্যস্ত ইরাক বর্তমানে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রের চিত্র তুলে ধরতে চাইছে। ২০১২ সালে বাগদাদে শেষ আরব লিগ সম্মেলন হয়েছিল, তখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শুরুর সময়।

সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর ডিসেম্বর থেকে দেশটি নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। রিয়াদ সফরে ট্রাম্প সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গেদেখা করেছেন। শারা একসময় জিহাদি হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং ইরাকে ২০০৩ সালের মার্কিন অভিযানের সময় আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট অভিযোগে কারাবন্দী ছিলেন।

তবে ইরাকে তার সফরের বিরোধিতা করে কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিক, যার ফলে তিনি বাগদাদ সম্মেলনে অংশ নেননি। তার বদলে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাাদ আল-শায়বানি সম্মেলনে অংশ নেন।

এ সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনা চলছে। ট্রাম্প কূটনীতির পথ অনুসরণ করলেও ইসরাইলের হুমকি-সংকেতের মাঝে বিষয়টি দ্রুত সমাধানে চাপ বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘চুক্তি খুব কাছে,’ তবে শুক্রবারই তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ইরান যদি দেরি করে, তাহলে খারাপ কিছু ঘটবে।’