বাসস
  ১৭ মে ২০২৫, ১২:৫২
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ১৩:১৬

ইউক্রেন শান্তি আলোচনা : বন্দী বিনিময়ে অগ্রগতি, যুদ্ধবিরতির কোনো চুক্তি হয়নি

ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন বছরেরও বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত সরাসরি শান্তি আলোচনায় ১,০০০ বন্দী বিনিময়ের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে।  উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি নিয়ে ধারণা বিনিময় এবং ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ভ্লাদিমির পুতিনের সম্ভাব্য বৈঠক নিয়েও আলোচনা করেছে।

ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি জানায়, তবে ইস্তাম্বুলের ডলমাবাহচে প্রাসাদে প্রায় ৯০ মিনিট স্থায়ী এই প্রতীক্ষিত আলোচনায় যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। ইউক্রেন একটি 'নিঃশর্ত
যুদ্ধবিরতি' চাইলেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কেবল বন্দী বিনিময়ের বিষয়টিতেই সুস্পষ্ট চুক্তি হয়েছে।

রাশিয়ার প্রধান আলোচক ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, 'আমরা নিজেদের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির রূপরেখা উপস্থাপন করব,' তবে কোনো লড়াই স্থগিত হয়নি। তিনি আরও বলেন, 'মোটের ওপর আমরা ফলাফলে সন্তুষ্ট এবং যোগাযোগ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।'

ইউক্রেনের পক্ষে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাসতেম উমেরভ বলেন, 'পরবর্তী পদক্ষেপ হবে দুই প্রেসিডেন্টের বৈঠক।' ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জর্জি তিখি এটিকে 'বন্দী বিনিময়ে একটি বড় সাফল্য' বলে উল্লেখ করেন।

পুতিন ‘ভীত’, বললেন জেলেনস্কি

আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান জানান, দুই পক্ষ লিখিতভাবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেবে এবং নীতিগতভাবে পুনরায় আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।

তবে আলোচনার ভিতরে রাশিয়া একাধিক 'অগ্রহণযোগ্য দাবি' তোলে বলে ইউক্রেন দাবি করেছে। একটি সূত্র জানায়, মস্কো কিয়েভকে আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে—যা আলোচনাকে ভেস্তে দেওয়ার কৌশল হতে পারে।

পুতিন নিজে ইস্তানবুলে না গিয়ে নিম্নপর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এ বিষয়ে বলেন, 'পুতিন ভয় পেয়েছেন' এবং আলোচনাকে গুরুত্ব দেননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আলবেনিয়ার এক ইউরোপীয় সম্মেলনে তিনি বলেন, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, বিশ্বকে ‘কঠোর প্রতিক্রিয়া’ জানাতে হবে, যার মধ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞাও থাকতে পারে।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই পুতিন-ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাবনার কথা বলেছে। জেলেনস্কির মুখপাত্র জানান, ইউক্রেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন ও পোল্যান্ডের নেতারা শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে অংশ নেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, যুদ্ধবিরতিতে রাশিয়ার অনীহা থাকলে নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করবে।

ট্রাম্প বলেন, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ না হওয়া পর্যন্ত “কিছুই ঘটবে না”, যদিও মাখোঁ জানান, প্রাথমিকভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ হতে পারে।

‘অগ্রহণযোগ্য দাবি’

আলোচনার আগে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, ট্রাম্পের বিশেষ দূত কিথ কেলগ এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করে। রুবিও 'হত্যা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন' উল্লেখ করে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান।

এএফপিকে এক ইউক্রেনীয় সূত্র জানায়, রাশিয়া কঠোর ভূখণ্ডগত দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর চারটি ও ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া মিলিয়ে মোট পাঁচটি অঞ্চল দখলে নেওয়ার দাবি জানায় মস্কো।

সূত্র মতে, রাশিয়া এমন দাবিও জানিয়েছে যে, ইউক্রেনকে তাদের নিয়ন্ত্রিত বড় অংশ থেকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে—যা যুদ্ধবিরতির পূর্বশর্ত হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

অন্য এক সূত্র জানায়, রাশিয়া সুমি ও খারকিভ দখলের হুমকিও দিয়েছে—যদিও আগে এসব অঞ্চলের ওপর তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক দাবি ছিল না।

পুতিন গত বছর বলেছিলেন, ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার রাশিয়া অধিকৃত অংশ থেকেও সেনা সরাতে হবে।