বাসস
  ১৭ মে ২০২৫, ১১:০৮

কঙ্গোর গোমায় নগদহীন জীবন : পাম তেলের ক্যান দিয়ে স্কুল ফি পরিশোধ

ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমায় নগদ অর্থের এতটাই আকাল পড়েছে যে কিছু অভিভাবক এখন পাম তেলের ক্যান দিয়ে সন্তানদের স্কুল ফি পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ডিআর কঙ্গোর গোমা থেকে এএফপি জানায়, জানুয়ারিতে রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ গোষ্ঠীর হাতে শহরটি পতনের পর ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) সরকার এম২৩-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ব্যাংকে নগদ অর্থ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যায়, এটিএমগুলোও প্রায় শূন্য, ফলে বাসিন্দারা প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

‘এখন প্রধান বিষয় হলো খাওয়ার মতো কিছু পাওয়া,’ বলছিলেন মাজেঙ্গো স্কুলের শিক্ষক রিচার্ড ম্বুয়েকি, পিতামাতার দেওয়া একটি তেলের ক্যান তুলে ধরে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, অভিভাবকেরা খাবারদাবার নিয়ে স্কুলে এসে নমুনা দেখান, এরপর আগ্রহী কোনো শিক্ষক থাকলে বাজারদরের ভিত্তিতে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে ফি হিসেব করা হয়।

‘আমরা টিকে আছি কোনোভাবে, কিন্তু এ অবস্থা চলতে পারে না,’ বলছিলেন ম্বুয়েকি।

মোবাইল পেমেন্ট ব্যবস্থার পরামর্শ দেওয়া হলেও গোমায় এটি এখনও খুব একটা জনপ্রিয় নয়। অন্যদিকে, টাকা বদলানো ব্যক্তিরা উচ্চহার নির্ধারণ করায় এম২৩ নির্দিষ্ট বিনিময় হার নির্ধারণ করেছে। তবু যাঁরা এখনো বেতন পান, তাঁদেরও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার নেই।

বেতন তুলতে অনেককে রুয়ান্ডায় পাড়ি জমাতে হচ্ছে, যা বাড়তি খরচ বাড়াচ্ছে। সরকারি কর্মচারী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত। নগদ সংকট ও আন্তর্জাতিক কর্মীদের একাংশের চলে যাওয়া বহু মানুষকে চাকরি হারাতে বাধ্য করেছে।

‘যুদ্ধ শুরুর পর কাজের সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে,’ জানালেন এক সময়ের সরকারি কর্মী গোডেল কাহাম্বি। ‘এখন আমি গৃহিণী। নতুন পোশাক, রেস্তোরাঁ, বিনোদন—সবই বাদ। এখন শুধু বেঁচে থাকার লড়াই।’

চাহিদা থাকলেও ক্রেতার অভাবে অনেক দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে পণ্য আছে, কিন্তু কেনার মতো নগদ নেই। নতুন কর, সরবরাহ ব্যাঘাত ও যুদ্ধরত পক্ষগুলোর চাঁদাবাজিতে খাদ্যের দামও বেড়েছে।

এম২৩ একটি আর্থিক কর্তৃপক্ষ গঠন করে জনগণকে সেখানে সঞ্চয় রাখতে বললেও সাড়া মেলেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি শুধু কর আহরণের কাজে সীমিত রাখা উচিত।

এদিকে গোমা ও বুকাভুতে রাত নামলেই বাড়ছে অপরাধ, কারণ নগদ সংকটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দারিদ্র্য।