বাসস
  ১৬ মে ২০২৫, ১২:৩৩

ওয়ালমার্টের শক্তিশালী ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ, শুল্কের কারণে মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা

ঢাকা, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শক্তিশালী আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে চীনসহ বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারের ওপর আরোপিত শুল্কের কারণে আগামী মাসগুলোতে পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি। নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।

ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী ডগ ম্যাকমিলান এক কনফারেন্সে বলেন, ‘আমরা আমাদের দাম যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু শুল্কের বর্তমান মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, সব চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।’

কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জন ডেভিড রেইনি জানান, মে মাসের শেষভাগ থেকে দাম বাড়তে শুরু করবে এবং জুনে এর প্রভাব আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। তিনি আরো বলেন, “যদি কোনো পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে সেই পণ্যের দাম দুই অঙ্কে বাড়তে পারে।’

ওয়ালমার্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রাহকদের ওপর শুল্কের কতটা প্রভাব পড়বে, তা নির্ভর করবে, তা নির্ভর করবে নির্দিষ্ট পণ্যের উপর।

রেইনি বলেন, কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ওয়ালমার্ট আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণ করতে পারে। বাজারে নিজেদের অবস্থান মজবুত এবং দাম কম রাখতে শুল্কের বড় একটি অংশ কোম্পানি নিজেই বহন করতে পারে।

সিএফআরএ রিসার্চের সিনিয়র ইক্যুইটি বিশ্লেষক অরুণ সুন্দরম বলেন, “আমরা দেখতে পারি যে কিছু শুল্কমুক্ত পণ্যের দাম বাড়বে, আবার কিছু শুল্কযুক্ত পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে বা কমতেও পারে।” 

প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালমার্ট ৪.৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১২.১ শতাংশ কম। তবে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার তুলনায় বেশি। কোম্পানিটির রাজস্ব ২.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৫.৬ বিলিয়ন ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালমার্টের দোকানগুলোতে তুলনামূলক বিক্রিতে ৪.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে মুদিপণ্য বিভাগের অবদান বেশি।

ম্যাকমিলান বলেন, “আমরা খাদ্যপণ্যের দাম যতটা সম্ভব কম রাখতে যে সব বিষয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। 

চীন ছাড়াও, ওয়ালমার্ট মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, ভারত ও কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণে পণ্য আমদানি করে। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, বাণিজ্য নীতির বিভিন্ন স্তরে এখনো আলোচনা চলছে, যা সব মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারকে প্রভাবিত করছে।

ডগ ম্যাকমিলান আরও জানান, “আমাদের ব্যবসার পরিধি এমন যে, কিছু পণ্যে শুল্ক লাগলেও আমরা তা গ্রাহকের ওপর না চাপিয়ে নিজে থেকেই বহন করতে পারি।” তিনি জানান, কিছু সরবরাহকারী অ্যালুমিনিয়ামের পরিবর্তে এখন ফাইবারগ্লাসের মতো শুল্কমুক্ত উপাদান ব্যবহার করছে।

ম্যাকমিলান আরো বলেন, কোস্টারিকা, পেরু ও কলম্বিয়া থেকে আমদানিকৃত কলা, অ্যাভোকাডো, কফি ও গোলাপের মতো পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ওয়ালমার্ট তার বার্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত রাখলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুনাফা সম্পর্কে কোনো পূর্বাভাস দেয়নি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা।

এদিকে, গ্লোবালডেটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নীল সন্ডার্স বলেন, ওয়ালমার্ট তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে, কারণ তাদের ব্যবসার একটি বড় অংশ মুদিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। তিনি সতর্ক করে বলেন, “শুল্কের কারণে সৃষ্ট যে ঢেউ এখন কিছুটা শান্ত, তা দেখে মনে করা ভুল হবে যে ঝড় একেবারেই থেমে গেছে। সামনে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।”

প্রাথমিকভাবে আয়ের খবরে ওয়ালমার্টের শেয়ারের দাম বেড়ে গেলেও, মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কার পর তা কমতে শুরু করে।

সিএফআরএ বিশ্লেষক অরুণ সুন্দরম বলেন, সাম্প্রতিক ইতিবাচক বাণিজ্য উন্নয়নের পরও ওয়ালমার্টের পুরো বছরের দৃষ্টিভঙ্গি না বাড়ানো বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে। তিনি আরো বলেন, “দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুনাফা পূর্বাভাস না দেওয়ায় অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ভবিষ্যতে আয়ের ক্ষেত্রে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।”