শিরোনাম
ঢাকা, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচির আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইরান। শুক্রবার তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তেহরানের সঙ্গে চুক্তির প্রায় কাছাকাছি রয়েছেন।
বৈঠকের আগে ইরানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সতর্ক করে বলেছেন, ২০১৫ সালের চুক্তির আওতায় জাতিসংঘের যে নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছিল, সেগুলো পুনর্বহাল করলে ‘অবর্ণনীয় পরিণতি’ ডেকে আনবে। তিনি আরো জানান, শুক্রবারের বৈঠক হবে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে।
বৈঠকে অংশ নিতে যাওয়া এই তিন ইউরোপীয় দেশ সংক্ষেপে ইথ্রি নামে পরিচিত। এরা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির সময় অন্যতম পক্ষ ছিল। বাকি অংশীদাররা হলো চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে অর্থাৎ ২০১৮ সালে একতরফাভাবে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ব্যাংকিং ও তেল খাতে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এর বছরখানেক পর ইরানও ধাপে ধাপে তাদের প্রতিশ্রুতি ফিরিয়ে নেয়। ওই চুক্তির আওতায় ইরান নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তির বদলে জাতিসংঘ তত্ত্বাবধানে পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখতে রাজি হয়েছিল।
ইউরোপীয় দেশগুলো বর্তমানে চুক্তির ‘স্ন্যাপব্যাক’ ব্যবস্থাটি সক্রিয় করার বিষয়টি বিবেচনা করছে, যার ফলে ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলা ফের কার্যকর হয়ে যাবে। তবে এই ব্যবস্থা কার্যকরের সুযোগ আগামী অক্টোবরেই শেষ হয়ে যাবে।
আরাগচি বলেন, এই সিদ্ধান্ত ‘একটি বৈশ্বিক পারমাণবিক সংকট ডেকে আনতে পারে, যার প্রভাব ইউরোপের ওপরই সবচেয়ে বেশি পড়বে।’ তবে তিনি ফরাসি সাপ্তাহিক ‘লে পয়েন্ট’এ এক নিবন্ধে লিখেছেন, ইরান ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত।
কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে চতুর্থ দফা পরমাণু আলোচনা শেষ হয়। ইরান সেই আলোচনাকে ‘কঠিন হলেও ফলপ্রসূ’ বলে উল্লেখ করে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বৈঠকটি আশাব্যঞ্জক ছিল।
ওমানের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনা ছিল ২০১৮ সালে চুক্তি পরিত্যাগের পর দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংলাপ।
এদিকে কাতার সফরের সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তির সময় ‘ঘনিয়ে আসছে’, যা সামরিক সংঘাত এড়াতে সহায়ক হবে।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা ইরানে কোনো পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটতে দেব না।’
ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প আবারো তার ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের’ কৌশল চালু করেছেন। তিনি একদিকে কূটনৈতিক আলোচনার পক্ষে মত দিয়েছেন, অন্যদিকে ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘এক্সিওস’ বৃহস্পতিবার জানায়, চতুর্থ দফা আলোচনার সময় ওয়াশিংটন ইরানকে একটি ‘লিখিত প্রস্তাব’ দিয়েছে। তবে আরাগচি এ দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমরা কিছুই পাইনি।’ তিনি বলেছেন, ‘আমরা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে স্বচ্ছতা ও আস্থা তৈরিতে প্রস্তুত, যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।’
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি ইরানের নেতৃত্বকে ‘অলিভ ব্রাঞ্চ’ বা শান্তির প্রতীকস্বরূপ প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই প্রস্তাব চিরকাল টিকে থাকবে না।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে আরো বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগ করা হবে এবং তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।
জানা যায়, বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশ সীমার অনেক ঊর্ধ্বে। যদিও তা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ৯০ শতাংশ নিচে।
তেহরান বলছে, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের রয়েছে এবং এটি কোনো আলোচনার বিষয় নয়। তবে তারা কতটা মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে, সেই বিষয়ে সাময়িক সীমাবদ্ধতা মানতে প্রস্তুত।
এর আগে গত বুধবার ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি বলেন, ‘ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায় না।’ তিনি আরো বলেছেন, ইরানের সব কার্যক্রম জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা (আইএইএ) এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে ইরানের অধিকার এবং এটি বন্ধ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’