বাসস
  ১৫ মে ২০২৫, ১৬:৪৫

উগ্র রুশপন্থী আলোচক ভ্লাদিমির মেদিনস্কি আবারও শান্তি আলোচনায় নেতৃত্বে

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ (বাসস): রাশিয়ার সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি ইস্তাম্বুলে রুশ-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার দায়িত্ব পেয়েছেন।

ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি জানায়, রুশ ইতিহাসের অতিদেশপ্রেমিক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যা প্রচারে পরিচিত মুখ ভ্লাদিমির মেদিনস্কি ২০২২ সালে ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের শুরুর দিকে ব্যর্থ শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

প্রায় তিন বছর ধরে চলা সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা রাশিয়ার দখলে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও তাকে ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন।

ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চাইছিলেন, আলোচনায় পুতিন নিজে উপস্থিত থাকুন—এই প্রস্তাবও দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। কিন্তু মস্কোর কিছু মিত্রসহ আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও আলোচনার ঠিক আগমুহূর্তে ক্রেমলিন জানায়, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন মেদিনস্কি। ইউক্রেন এই সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞাসূচক হিসেবে দেখছে এবং মস্কোর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

৫৪ বছর বয়সী মেদিনস্কি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। পুতিনের শাসনামলে তিনি রুশ ইতিহাসের এক জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, যেখানে ইউক্রেনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না এবং রাশিয়ার ভূখণ্ড-ভিত্তিক দাবিকে অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরা হয়।

স্বাধীন ইতিহাসবিদরা বরাবরই মেদিনস্কির এই ব্যাখ্যাকে তথ্যের অপব্যবহার বলে অভিহিত করেছেন।

২০২০ সাল থেকে মেদিনস্কি প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে ২০১২ সালে পুতিনের পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার সময় সংস্কৃতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি।

ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুদ্ধ বিষয়ক প্রোপাগান্ডা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন মেদিনস্কি। স্কুলপাঠ্য বইয়ে এই সংঘাতকে ‘শান্তি রক্ষার প্রচেষ্টা’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন তিনি।

তার রচিত স্কুল পাঠ্যবইয়ে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলকে ‘রাশিয়ার নায়কোচিত পদক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং ইউক্রেনকে ‘চরম জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি একাধিকবার বলেছেন, ইউক্রেন নামে কোনো রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই এবং অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য ‘ইউক্রেনীয় ধারণাটি’ গড়ে তুলেছিল।

১৯৭০ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউক্রেনের এক ছোট শহরে জন্ম মেদিনস্কির। পরে কৈশোরেই তিনি মস্কো চলে যান। ২০২২ সালের মার্চে পুতিন তাকে বেলারুশ ও ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেন।

তবে ওই আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং যুদ্ধ চলতে থাকে। রাশিয়া পরে দাবি করে, ইউক্রেন চুক্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল, কিন্তু পশ্চিমা চাপের কারণে সরে আসে।

২০২৪ সালে মেদিনস্কি বলেন, 'পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে আলোচনা থেকে সরে যেতে বাধ্য করে এবং রাশিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে হারানোর পথেই ঠেলে দেয়।'

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা করেন মেদিনস্কি। তার ভাষ্য, 'ট্রাম্পের উদ্যোগ রাশিয়ার ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ের পাতায় ঠাঁই পাবে।'

তবে নিজ দেশে মেদিনস্কির বিতর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিরও সমালোচনা রয়েছে। রুশ ইতিহাসবিদরা আগেও অভিযোগ তুলেছেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাস বিকৃত করেন এবং ভুল তথ্য পরিবেশন করেন।